মুসলিমবিশ্ব পরিচিতি ইন্দোনেশিয়া
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রকৃতি ও পরিবেশ ডেস্ক
এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের মাঝখানে অবস্থিত দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ এটি। এছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া। প্রচলিত তিন শতাধিক ভাষায় সমৃদ্ধ দেশটি জাতিগতভাবেও বেশ বৈচিত্র্যময়। গ্রামীণ শিকারি সম্প্রদায় থেকে অভিজাত শহর পর্যন্ত প্রায় সব ধরনের মানুষের বাস দেশটিতে। দেশটিতে ডাচদের আগমণের আগে বেশ কয়েকটি অভিজাত রাজ্য ছিল। এক সময়ের ডাচ উপনিবেশ থাকা দেশটি আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৪৯ সালে স্বাধীন হয়। বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হওয়ার পরও দেশটির কয়েকটি রাজ্য স্বাধীনতার জন্য লড়ছে। স্বাধীনতাকামী রাজ্যগুলোতে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
ইন্দোনেশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
রাষ্ট্রীয় নাম : রিপাবলিক অব ইন্দোনেশিয়া
রাজধানী : জাকার্তা
আয়তন : ১৯ লাখ ৪ হাজার ৫৬৯ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা : ২৭ কোটি ৫৭ লাখ
ভাষা : ইন্দোনেশীয়, আঞ্চলিক অন্যান্য ভাষা
গড় আয়ু : পুরুষ ৬৮, নারী ৭২
মুদ্রা : ইন্দোনেশীয় রুপিয়া
নেতৃত : প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জোকো জোকোই উইদোদো। দেশটির নব্য উত্থিত গণতন্ত্রে নতুন ধারার রাজনীতিকদের যাত্রা শুরু হয় তার মাধ্যমে। দুর্নীতির বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তাকে। তবে দেশটির সাধারণ জনগণের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে তার।
রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি আসবাবপত্র তৈরি করতেন। তার বাবা ছিলেন একজন কাঠ বিক্রেতা। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেন জোকো। এছাড়া দেশটির কাঠামোগত উন্নয়নসহ সেবা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। ২০১৯ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।
সংবাদমাধ্যম : দেশটিতে টেলিভিশনের বহুল ব্যবহার থাকলেও সময়ের সঙ্গে অনলাইন মিডিয়াও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে ফেসবুক সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
এছাড়া দেশটির জনসংখ্যার একটি বড় অংশ টুইটারে বেশ সক্রিয়। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের মতে, দেশটির অধিকাংশ সাংবাদিক সেল্ফ সেন্সরে থাকে। কেননা, ধর্মবিদ্বেষী ও অনলাইন কন্টেন্টে সরকারের নজরদারি রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা
১৬৭০-১৯০০ : ডাচ ঔপনিবেশিকরা ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ নামে সমগ্র ইন্দোনেশিয়াকে একক সরকারের অধীনে নিয়ে আসে।
১৯৪২ : ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ জাপানের অধীনে চলে যায়।
১৯৪৯ : চার বছরের গেরিলা যুদ্ধের পর ডাচ উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হয় ইন্দোনেশিয়া। স্বাধীনতার পর দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হন সুকর্ণ।
১৯৫০-এর দশক : মালুকু (মোলুকাস) দ্বীপটি ইন্দোনেশিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে; কিন্তু পরবর্তীতে আর স্বাধীন হতে পারেনি।
১৯৬২ : নেদারল্যান্ডসের ওয়েস্টার্ন নিউ গিনি বা পশ্চিম পাপুয়া ছিল জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে। পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার দখলে চলে যায় পশ্চিম পাপুয়া।
১৯৬৩-৬৬ : ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া সংঘর্ষ। ফেডারেশন অব মালয়েশিয়া গঠনে ইন্দোনেশিয়ার বিরোধিতার জেরে যুক্তরাজ্য ও কমনওয়েলথ বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের সৃষ্টি হয়। ১৯৬৬ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ পদত্যাগের পর এ বিরোধের নিষ্পত্তি হয়।
১৯৬৫ : বামপন্থিদের নির্মূলে কয়েক হাজার সন্দেহভাজন কমিউনিস্টকে হত্যা করা হয়।
১৯৬৬ : জেনারেল সুহার্তোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন সুকর্ণ। ১৯৬৭ সালের মার্চে জেনারেল সুহার্তো প্রেসিডেন্ট হন।
১৯৬৯ : পশ্চিম পাপুয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্দোনেশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৭৫ : পর্তুগালের থেকে স্বাধীন হয় পূর্ব তিমুর। এর পরের বছরই ইন্দোনেশিয়া পূর্ব তিমুর দখল করে নিজেদের রাজ্যে পরিণত করে।
১৯৯৭ : এশিয়ায় অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়। এ সময় ইন্দোনেশীয় রুপিয়ার মান হ্রাস পায়। পরের বছর বিক্ষোভ ও দাঙ্গার মুখে প্রেসিডেন্ট সুহার্তো পদত্যাগ করেন।
১৯৯৯ : পূর্ব তিমুর স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয় এবং জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে চলে যায়।
২০০২ : ইন্দোনেশিয়ার বালির কুটা বিচ নাইটক্লাব জেলায় জঙ্গী বোমা হামলায় দুই শতাধিক নিহত হয়। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক।
২০০৪ : দেশটিতে প্রথমবারের মতো সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
ডিসেম্বর ২০০৪ : সুমাত্রার সমুদ্র তলদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দেশটির প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ মারা যান; নিখোঁজ হন বহু মানুষ। নিকটবর্তী ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও সোমালিয়াতেও তাণ্ডব চালায় এই জলোচ্ছ্বাস।