ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হেমন্তপ্রেম

হুমাইদুল্লাহ তাকরিম
হেমন্তপ্রেম

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে হেমন্ত ঋতুতে প্রধান ফসল ধান ঘরে ওঠে। সারা বছরের মহাজনের কাছ থেকে ধার নেয়া-পাওনা পরিশোধের সুযোগ হয় ফসল ঘরে ওঠার পরে। সারা বছরের মুখের অন্নের জোগানও আসে এ সময়। হেমন্ত তাই সুখ-সমৃদ্ধির কাল। মুখের হাসিটা অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশিই থাকে কার্তিকের নবান্নের দেশের মানুষের। হেমন্ত এলে পাল্টে যায় প্রকৃতি ও মানুষ। গ্রামের পরিবেশে আনন্দ বিরাজ করে। গ্রাম্য মেলা, ঘরে ঘরে পিঠাণ্ডপায়েস বানানোর আয়োজন, ঢেঁকির শব্দ- সব মিলিয়ে এক অন্যরকম প্রকৃতিকে বরণ করে নেয় হেমন্তে। এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম, বকফুল। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রস্তুত হয় প্রকৃতি। খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুত হতে দেখা যায় গাছিদের। তোলা হয় নতুন আলু।

হেমন্ত বাংলার জীবন সমৃদ্ধ করে : শরতের শুভ্রতা শেষে হেমন্ত বাংলার জীবনকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করে। হেমন্তের স্নিগ্ধ, মায়াময় প্রকৃতির মধ্যে মানুষ যেন তার জীবন খুঁজে ফেরে। এ ঋতুতে মানুষের আসে প্রেম। ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা ও অভিলাষ। হেমন্ত বাংলার মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে ভাব, প্রকৃতিপ্রেম, বাঙালিয়ানা আর নিরন্তর সৃজনশীল কর্ম। শিশির ভেজা দুর্বাঘাস মাড়িয়ে প্রকৃতির মধ্যে হেমন্তের প্রবেশ সৃজনশীল মানুষের মন ও হৃদয়কে নানাভাবে চাঙ্গা করে। হেমন্ত ঋতুতে প্রকৃতি ও মানুষের রূপবদল খুবই অপূর্ব। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে কেবল সোনালি ধান আর ধান। সোনালি ধানের ক্ষেত ডিঙিয়ে পূর্ব দিগন্ত রাঙিয়ে ওঠে ভোরের সূর্য। হেমন্তের আসল রূপের বর্ণনা মেলে প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দের কবিতায়। প্রকৃতি রং বদলায় তার নিজস্ব নিয়মে। প্রকৃতির পরতে পরতে কত বিচিত্র রং যে মিশে আছে! চোখ খুলে দেখলে মনের গহীনে তা উপলব্ধি করা যায়। বারবার প্রকৃতি তাই বিশ্ব চরাচরে এক রহস্যের নাম।

প্রকৃতিতে এনে দেয় ভিন্নমাত্রা : শিশিরস্নাত সকাল, কাঁচাসোনা রোদমাখা স্নিগ্ধসৌম্য দুপুর, পাখির কলকাকলি ভরা ভেজা সন্ধ্যা আর মেঘমুক্ত আকাশে জোছনা ডুবানো আলোকিত রাত হেমন্তকে যেন আরও রহস্যময় করে তোলে সবার চোখে। প্রকৃতিতে এনে দেয় ভিন্নমাত্রা। নবান্ন মানেই চারিদিকে পাকা ধানের মণ্ডম গন্ধ, নতুন অন্ন। গ্রামের মাঠে মাঠে চলে ধান কাটার ধুম। হেমন্তে এ ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। গৃহস্থবাড়িতে নতুন ধানে তৈরি পিঠাপুলির সুগন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়ায়। বিশ্বকবি ও জাতীয় কবির চোখে হেমন্ত ধরা দিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রূপে। হেমন্তের রয়েছে অপার সৌন্দর্য। মানুষের মনকে নানা রঙে রাঙিয়ে তোলে এ সৌন্দর্য। প্রেমিক হৃদয়কে মাতোয়ারা করে দেয় তার আশ্চর্য জগৎ। যেখানে জীবন ও মানুষ হয়ে ওঠে মূল শক্তি।

লেখক : সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত