১৮৫২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তন হয়। তখন সর্বপ্রথম থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপিত হয়। যার ধারাবাহিকতায় আজ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম এ উৎসবের আয়োজন হয়। যা কালের পরিক্রমায় ভয়ংকর অপসংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। মধ্যরাত থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা। বিশেষত ঢাকার অলি-গলিতে চলে বাঙালি সংস্কৃতির অসমর্থিত সব কর্মকাণ্ড।
বিধর্মীদের সাদৃশ্য নিষেধ : থার্টিফার্স্ট নাইট বিধর্মীদের উৎসব। যা ১৮৫২ সালে খ্রিষ্টানদের দ্বারা প্রবর্তিত। ইসলামে বিধর্মীদের অনুসরণ করা নিষেধ। যে অনুসরণ করবে, সে হবে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে, কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ৮৫)। হাদিসে ভিন্ন জাতির সাদৃশ্য অনুসরণের ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে, সে সেই জাতির অন্তর্ভুক্ত।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪০৩১)।
ব্যভিচার এড়িয়ে চলুন : জিনা রাষ্ট্র ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে একটি অশ্লীল কাজ। এর শাস্তি ভয়াবহ। তাই আল্লাহতায়ালা জিনার কাছেও যেতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা জিনা-ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’
(সুরা বনি ইসরাইল : ২২)। থার্টিফার্স্ট নাইটে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা হয়। মেয়েদের যৌন আবেদনশীল পোশাক অশ্লীলতার অন্যতম কারণ। যা যুবক-যুবতিদের জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হতে বাধ্য করে।
রাসুল (সা.) অশ্লীলতা ছড়ানো যুবক-যুবতিদের শাস্তি সম্পর্কে বলেন, ‘যে নারীরা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ, পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে, নিজেরাও আকৃষ্ট হয়, যাদের মাথা বাঁকা ও উঁচু কাঁধবিশিষ্ট উটের মতো, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।’ (মুসলিম : ২১২৮)।
গান-বাজনাকে না বলুন : থার্টিফার্স্ট নাইটে শহর-গ্রামে সর্বত্র চলে গান-পার্টির আয়োজন।
সারারাত চলে গানের আসর। আর গান-বাজনার দ্বারা কোনোভাবেই বর্ষবরণ মেনে নেওয়া যায় না। এসব পার্টি ও গান-বাজনা দ্বারা মানুষকে পথভ্রষ্ট করা ছাড়া কিছুই হয় না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘একশ্রেণির লোক আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে
অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা লোকমান : ৬)। গায়ক-গায়িকা ও গান শ্রবণকারীদের শাস্তিও ভয়াবহ। তারা পৃথিবীতেই লাঞ্ছিত হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার ওপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকাদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহতায়ালা তাদের পৃথিবীতে ধসিয়ে দেবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪০২০)।
অর্থ অপচয় না হোক : মধ্যরাত তথা রাত ১২টা ১ মিনিটে শুরু হয় নববর্ষের উৎসব। জায়গায় জায়গায় ফুটানো হয় আতশবাজি ও পটকা জাতীয় ছোট বোমা। আকাশে উড়ানো হয় ফানুস।
এ ধরনের অসুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে জনমনে সৃষ্টি হয় ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা বিনা অপরাধে মোমিন নর-নারীকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’
(সুরা আহযাব : ৫৮)। আতশবাজি, পটকা ও ফানুশ ক্রয়সহ জায়গায় জায়গায় আয়োজিত নাচণ্ডগান ও পার্টিতে লাখো টাকা অপচয় হয়।
অথচ ইসলামে অপচয় নিষেধ। আল্লাহতায়ালা অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা পানহারা কর; কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ : ৩১)।
শিরকযুক্ত স্লোগান বন্ধ করুন : ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা।’
থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনকারী সবার মুখ এ স্লোগানে মুখরিত থাকে। স্লোগানে আগুন দ্বারা পৃথিবীকে পবিত্র করার কথা বলা হয়েছে। অথচ এটি শিরকি বাক্য। আর আল্লাহতায়ালা শিরকের গোনাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে অংশীদার স্থাপনকারীকে ক্ষমা করবেন না।’ (সুরা নিসা : ১১৬)।