ঢাকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টেকসই উন্নয়নে জলাভূমি

হুমাইদুল্লাহ তাকরিম
টেকসই উন্নয়নে জলাভূমি

নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, হাওর-বাঁওড়সহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো এ দেশের প্রাণ। অথচ গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও শহর পর্যায়ে একের পর এক জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ভরাট করা বেআইনি। আবার বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০ অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি, এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর বা জলাধার ভরাট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন অমান্য করে প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংস করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে।

নগরায়ণের চাপে হারাচ্ছে জলাভূমি : চারপাশের বাতাসকে শীতল রাখা, বর্ষা মৌসুমে বন্যা প্রতিরোধ, শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন, পানির চাহিদা পূরণ ও আবর্জনা পরিশোধনে জলাভূমিগুলোর গুরুত্ব অনেক। যদি জলাধারগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং শহরে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে এক ফোঁটা পানিও কি পাওয়া যাবে! জলাভূমিগুলো তো নগরের তাৎক্ষণিক পানি সরবরাহের সবচেয়ে বড় উৎস। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ণের চাপে একের পর এক জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীতে একসময় প্রায় ২ হাজার পুকুর, ৫২টি খাল ও অসংখ্য ঝিল ছিল। এর বেশিরভাগই এখন আবাসনের চাহিদা মেটাতে নিচু জায়গা ভরাট করতে করতে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। শুধু ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে বছরে প্রায় ৫ হাজার একর জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। আর সারা দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৪২ হাজার একর জলাধার ভরাট করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা শহরে জলাভূমি ভরাটের বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বেশিরভাগ খাল ও নিচু জায়গা ভরাট করে ফেলার ফলে এখন একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় পড়তে হয় নগরবাসীকে। চারপাশের নদীগুলোর সঙ্গে খালগুলোর সংযোগ কাটা পড়েছে। ময়লা-আবর্জনায় ভরে গিয়ে খালগুলো যেন মশা তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। অথচ পরিকল্পনামাফিক উদ্যোগ গ্রহণ করলে খালগুলো বিনোদনের ক্ষেত্র হতে পারত।

জলাভূমি রক্ষায় আইনের প্রয়োগ : জলাভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিনোদনকেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে অনেক হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪৪ লাখ হেক্টর জলাভূমি রয়েছে। অন্যতম বৃহৎ জলাধার চলনবিলের আয়তন আগের চেয়ে অনেক সংকুচিত হয়েছে।

আবার বিভিন্ন সময় লিজ বা ইজারা দেয়ার ফলে লাভের চেয়ে জলাধারগুলোর বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয়েছে বেশি। ফলে উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি দেশি মাছের বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হয়েছে। বেড়েছে বিদেশি মাছের উৎপাদন। জলাভূমি রক্ষায় প্রচলিত আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। জলাভূমিগুলো আমাদের সম্পদ, জীববৈচিত্র্যের আধার। জলাধার থেকে ব্যক্তি, স্থানীয় জনগণ ও সরকার যাতে লাভবান হতে পারে এবং জলাধারও রক্ষা পায়, এমন সব উদ্যোগের কথা ভাবতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত