ঢাকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জলাধার সংরক্ষণে আইন

আবু তাকরিম
জলাধার সংরক্ষণে আইন

বাংলাদেশে নদী-নালা, বিল, হাওর-বাঁওড়ের মতো বহু জলাভূমি রয়েছে। দেশের ৭ থেকে ৮ লাখ হেক্টর ভূমি কোনো না কোনো জলাভূমির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এসব ভরাটের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও নগরের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরাই নদী, বন, জলাভূমি দখল করে। এগুলোর আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর তথ্য বলছে, সারাদেশে প্রতি বছর ৪২ হাজার একর কৃষিজমি ও জলাশয় ভরাট হচ্ছে। ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে পাঁচ হাজার ৭৫৭ একর জলাভূমি ভরাট হয়েছে। এর ফলে জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নদী, খাল-বিল, পুকুর ইত্যাদি পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া চারপাশের বাতাসকে শীতল রাখা, বর্ষা মৌসুমে বন্যা প্রতিরোধ, শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন, পানির চাহিদা পূরণ ও আবর্জনা পরিশোধনে জলাভূমিগুলোর গুরুত্ব অনেক।

আইনে যা যা বলা আছে : প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ধারা ৫ অনুযায়ী খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এ ছাড়া এ ধরনের জায়গার অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তরও করা যাবে না। একই আইনের ধারা ৮ (১)-এ বলা হয়েছে, কেউ এ আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। এ ছাড়া উচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত করারও বিধান রয়েছে। ধারা ৮ (২) ও ৮ (৩)-এ এ ধরনের কারাদণ্ডের জন্য শাস্তি এবং নিজ খরচে সেটা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৬ মে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব খাল, খেলার মাঠ ও পার্ক রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত দুটি করে খেলার মাঠ থাকার কথা রয়েছে।

জলাধার রক্ষা সবার দায়িত্ব : সব ধরনের আইনকানুন ও আদালতের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খেলার মাঠ দখল চলছেই। এ ছাড়া সারাদেশেই নদী-খাল দখল-দূষণের মহোৎসব চলছে। চর পড়ে এবং দখল-দূষণের কারণে দেশের নদী-খালগুলো এখন মৃতপ্রায়। হারিয়ে যাওয়ার পথে বহু নদী-খাল-জলাশয়। যখন যেভাবে প্রয়োজন, তখন সেভাবে নদী-খাল-জলাশয় ব্যবহার করা হচ্ছে। ভরাট করে দখল করার উৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালীরা। সারাদেশ যেন এখন নদী-খাল-জলাশয়বৈরী দেশে পরিণত হয়েছে। একের পর এক জলাভূমি হারিয়ে যাওয়া মানে জেনে-বুঝে দেশের ক্ষতি ডেকে আনা। তাই জলাভূমি রক্ষায় প্রচলিত আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

জলাধার রক্ষা সবার দায়িত্ব। স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে জলাভূমিগুলো সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা চাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত