ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বন সংরক্ষণ করুন

বন সংরক্ষণ করুন

একটি বন সহজে গড়ে ওঠে না, কিন্তু অনায়াসে ধ্বংস করা যায়। আমাদের দেশে ক্রমেই প্রাকৃতিক বন সীমিত হয়ে আসছে। এটা হচ্ছে মূলত মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডের ফলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বন ধ্বংস করা হয়, এমন অভিযোগও উঠেছে। মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্ট পুড়েছে সপ্তাহের অধিক সময় ধরে। এরই মধ্যে প্রায় ৪০ হেক্টর এলাকা বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়েছে। ছোট-বড় পাহাড় এবং টিলায় এ বনের মধ্যে বাড়তি সৌন্দর্য যুক্ত করেছে। রয়েছে নানা ধরনের বন্যপ্রাণী এবং পশুপাখি। অবাক হলেও সত্য, কয়েক দিন ধরে এ বন আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে।

অথচ অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা দৃশ্যমান ছিল না। সহযোগী পত্রিকায় প্রকাশ, সমনভাগ বিটের দলছড়ি ও মাকাল জোরা এলাকায় রয়েছে ছোট-বড় অনেক পাহাড়। এসব পাহাড়ের প্রায় ৪০ হেক্টর বন আগুনে পুড়ে গেছে। মারা যাচ্ছে বনে থাকা বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি, পোকামাকড় ও জীবজন্তু। আগুনে পুড়ে অজগর, চশমাপরা হনুমান, মায়া হরিণ, কচ্ছপ, বনরুই, সজারুসহ বিভিন্ন সরীসৃপ প্রজাতির বিরল কীটপতঙ্গ মারা গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, আগুন দেখার পরপরই বন বিভাগকে তারা অবহিত করলেও বন বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টিকে আমলে নেয়নি। বিষয়টি অনভিপ্রেত।

তথ্য অনুযায়ী, পাথারিয়া প্রাকৃতিকভাবে সাজানো-গোছানো একটি বন ছিল। তবে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী এবং অসাধু বন কর্মকর্তার যোগসাজশে অবাধে চলছে বৃক্ষনিধন। নানা ধরনের বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল ছিল এ বন। এক সময় এ বনে হাতি এবং মায়া হরিণের অবাধ বিচরণ ছিল। বন কাটা শুরু হওয়ার পর থেকে হাতি এবং হরিণগুলো চলে গেছে। স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, পরিবেশগতভাবে মিশ্র চিরসবুজ সমনভাগ বনাঞ্চলের এ অংশটি ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য হটস্পটের একটি অংশ এবং এটি ভারত-বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্তব্যাপী ছয়টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যকার একটি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ওই সমনভাগ বনাঞ্চলে প্রায় ৬০৩ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং উভচর সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীর সমন্বয়ে মোট ২০৯ প্রজাতির মেরুদণ্ডী বন্যপ্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ২০ প্রজাতির উভচর, ৪৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ১১৩ প্রজাতির পাখি ও ৩১ প্রজাতির স্তন্যপায়ীসহ অসংখ্য বিরল এবং বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র। সমনভাগ বনাঞ্চলটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল মিলে চির সবুজ একটি বনাঞ্চল এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীবৈচিত্র্য রক্ষায় বাংলাদেশের মধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অবস্থান অন্যতম। এ বনটি নিঃসন্দেহে আমাদের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্যের বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালা, লতাপাতা হচ্ছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। এগুলো যখন আগুন পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়, তখন প্রাণী বিলুপ্ত হওয়া স্বাভাবিক। সংগত কারণেই বন বিভাগের উচিত এ রকম গভীর বনকে প্রাকৃতিকভাবে রাখা। এখানে বনায়ন করলে বন থাকবে না। অচিরেই হারিয়ে যাবে এখানকার সব বন্যপ্রাণী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত