ঘরে বসে চাকরির পড়া প্রস্তুত করে দিচ্ছে বিদ্যাবাড়ি

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিত্যজীবন প্রতিবেদক

‘আমি কখনোই ভাবিনি, আমার মতো প্রত্যন্ত গ্রামে থাকা একটি মেয়ের গ্রামের বাড়িতে বসে থেকে প্রথমবারেই সরকারি প্রাইমারি চাকরি হয়ে যাবে। কখনও কল্পনাও করিনি, ঘরে বসে থেকে অনলাইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরির জন্য এভাবেও প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। বিদ্যাবাড়ি ডটকম সেটি করে দেখিয়ে দিয়েছে। আমার মতো একজন সাদামাটা প্রার্থীকেও তারা অসাধারণ করে তুলে এনেছে। আমি অবশ্যই বিদ্যাবাড়ির স্যারসহ গোটা টিমের কাছে কৃতজ্ঞ। কথাগুলো বলেছেন লিমা খাতুন নামে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এলাকার এক শিক্ষার্থী। যিনি ‘বিদ্যাবাড়ি’ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ক্লাস, পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরামর্শ সেবা নিয়ে চাকরি প্রস্তুতির জন্য অনলাইনেই কোর্স শেষ করে এবারের প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। জানা গেল, কেবল গাইবান্ধা নয় ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, কক্সবাজারসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে এবারের প্রাইমারি পরীক্ষায় বিদ্যাবাড়ি থেকে ৫৫২ জন চাকরি পেয়েছেন। এদের অনেকেই ঢাকায় বিদ্যাবাড়ি অফিসে এসে বিদ্যাবাড়ির শিক্ষকদের মিষ্টিমুখ করিয়ে গেছেন। বিদ্যাবাড়ির ফেইসবুক পেইজে প্রতিদিন এত তথ্য ও কর্মকাণ্ড থাকে যে, শুধু Biddabari Facebook pageটি ফলো করেই ৪০তম বিসিএসে পুলিশ, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বিদ্যাবাড়ির এরকম বিসিএস ক্যাডার শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। অজোপাড়াগাঁ কিংবা ঢাকার ব্যস্ততায়, বিসিএস, ব্যাংক জব, প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ, কিংবা স্পোকেন ইংলিশ, আইইএলটিএস পরীক্ষার মতো সব রকম পড়ালেখার গোছানো প্রস্তুতি সেটিও একেবারে বাড়িতে বসে থেকেই করা যায় অনলাইন ডিজিটাল প্লাটফর্ম biddabari.com থেকে। দারুণ সব কাজ, দারুণ সব উদ্ভাবনী কৌশল। কখনও মেগা রেকর্ড আলোচনার মাধ্যমে নানারকম দরকারি ও জরুরি তথ্য দিয়ে সেগুলোর ওপর বাড়ির কাজ দিয়ে, কখনও লাইভ আলোচনায় সমস্যার সমাধান করে, কখনও বিশেষ নোট ও এক্সক্লুসিভ শিট কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিয়ে বিদ্যাবাড়ির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে তোলা হচ্ছে। এমনভাবে চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দেওয়া হচ্ছে যেন তারা একাডেমিক পড়াশোনা করছেন। এগুলো সবই হচ্ছে অনলাইনে। একেবারে ঘরে বসেই দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, কক্সবাজার, সিলেটসহ দেশের সব প্রান্ত থেকে যেমন হাজারও শিক্ষার্থী প্রায় বিনামূল্যে নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি গুছিয়ে নিতে পারছেন, তেমনি রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলগুলো থেকেও বিভিন্ন অনার্স মাস্টার্স করা শিক্ষার্থীরা কিংবা সদ্য পড়ালেখা শেষ করা চাকরির খোঁজে থাকা জবপ্রত্যাশীরাও বিদ্যাবাড়ির অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তাদের প্রস্তুতি গুছিয়ে নিয়ে বিসিএস, ব্যাংক, প্রাইমারিসহ অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় সফল হচ্ছেন। বিদ্যাবাড়ির ফেইসবুক পেইজটিতে এখন প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার ফলোয়ার। বিদ্যাবাড়ি ইউটিউবে প্রায় ৫০ হাজার সাবস্ক্রাইবার, গ্রুপগুলোতে প্রায় এক লাখ সদস্য মিলে প্রায় ৬ লাখ চাকরিপ্রত্যাশীরা নিয়মিত ফ্রি সেবা পাচ্ছেন। এর পাশাপাশি নতুন করে biddabari.com ওয়েবসাইট এবং Biddabari App -এ ফলোয়ার রয়েছে লাখ খানেক। এ ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে যেভাবে বিদ্যাবাড়ি পড়া দিয়ে কাজগুলো আদায় করে নেয়, কিংবা নিয়মিত ফ্রি পরীক্ষা নিয়ে কখনও কিছু পেইড কোর্স দিয়ে আবার কখনো বিনামূল্যে কোর্স করিয়ে চাকরিপ্রত্যাশী প্রার্থীদের প্রস্তুত করে তোলে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৭০ ভাগ মানুষের বয়স ৩০ বছরের নিচে বা এর কাছাকাছি। এ কারণে লাখ লাখ বেকার শিক্ষার্থী তাদের স্নাতক পড়াশোনা শেষ করেই সরকারি-বেসরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে থাকে। এক্ষেত্রে তারা গাইডলাইন বা পরামর্শের জন্য চাকরির প্রস্তুতিতে সহায়তা করে এরকম বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে যায় এবং অনেক টাকা দিয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু এ কোচিংগুলো থাকে মূলত ঢাকায়, নয়তো দেশের বিভাগীয় শহর গুলোতে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাকরি প্রত্যাশিরা চাইলেও সরাসরি গিয়ে এগুলোর সুবিধা নিতে পারেনা। এ ছাড়া এ সব কোচিং সেন্টারে অনেক বেশি কোর্স ফি থাকে এবং পড়াশোনার মান সেরকম যথার্থ না হওয়ায় চাকরিপ্রত্যাশীরা পরিপূর্ণ প্রস্তুতির অভাবে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন না। এসব কারণে শুধু ঢাকার নামকরা সাবজেক্ট বা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই ভালো ভালো চাকরিগুলোতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চলে এবং নিয়োগ পায়। এতে সরকারি চাকরি কিংবা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন অনেক ক্ষেত্রেই স্বপ্নই থেকে যায়। এসব বিষয়গুলো চিন্তা করেই ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ ও বিসিএস ক্যাডার মাইদুল ইসলাম প্রধান যিনি সবার কাছে এম আই প্রধান মুকুল স্যার হিসেবেই বিশেষ পরিচিত, তিনি ২০১৯ সালের শেষের দিকে Biddabari.com নামে একটি অনলাইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথমত, তিনি নিজের লব্ধ অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ারের মাধ্যমে বিসিএস, ব্যাংক জব এবং প্রাইমারিসহ নানান ধরনের সরকারি-বেসরকারি চাকরিপ্রত্যাশীদের বিনামূল্যে পরামর্শ দিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে করোনা ভাইরাসের আক্রমণের ফলে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বিরূপ প্রভাব তৈরি হয় তার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরেও পড়ে এবং সব ধরনের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের মাঝে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুতি গ্রহণের অন্যতম সেরা মাধ্যম হয়ে ওঠে। সেই সময়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই বিদ্যাবাড়ি তার কলেবর ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকে এবং চাকরির প্রত্যাশি ও উচ্চশিক্ষা ভর্তিচ্ছুদের জন্য অনলাইন শিক্ষার নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করে। বর্তমানে বিদ্যাবাড়ির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অর্থাৎ ফেইসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী বিনামূল্যে সেবা পাচ্ছেন। এ ছাড়া অ্যাডভান্স প্রস্তুতির জন্য বিদ্যাবাড়ির রয়েছে অ্যাপ ও ওয়েবসাইট। এসব পেজ এবং অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফ্রি সার্ভিসের (পরামর্শ কিংবা দিকনির্দেশনা, ভিডিও টিউটোরিয়াল, পরীক্ষা, স্টাডি ম্যাটেরিয়াল ইত্যাদি) পাশাপাশি কিছু পেইড কোর্সও রয়েছে। যেখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এমনকি দেশের বাইরে থেকেও দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশিরা বিভিন্ন ধরনের সেবা নিয়ে চাকরি কিংবা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সফল হচ্ছেন।