২০২২ সালে বৈশ্বিক মন্দাতেও রপ্তানি আয়ে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এ ২০২২ সালের প্রথম ১১ মাসে প্রথমবারের মতো দেশে থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ডিসেম্বরসহ এ আয় ৫৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বছরভিত্তিতে এবারই প্রথম বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে প্রবেশ করেছে। অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাতসহ রপ্তানি আয় ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এদিকে, ২০২২ বছরটি শুরুই হয়েছিল রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে। প্রথম চার মাস রপ্তানি আয় টানা ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিলো। ১১ মাসের মধ্যে ৯ মাসই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ছিল দেশের রপ্তানি আয়। কেবলমাত্র সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি মুখে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। বৈশ্বিক মন্দাতেও রপ্তানির প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় বছরজুড়ে দাপট দেখিয়েছে দেশের পোশাক। সবমিলিয়ে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে বছরটি ছিল সন্তোষজক।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, চলতি বছরের ১১ মাসে ৪৯ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বছরের প্রথম চার মাস টানা রপ্তানি আয় ৪ বিলিয়ন ডলারে বেশি ছিল। মাত্র তিন মাস রপ্তানি আয় ৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে ছিল। সর্বশেষ নভেম্বরে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ১১ মাসের মধ্যে ৯ মাসই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ছিল দেশের রপ্তানি আয়। কেবলমাত্র সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি মুখে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে।
ইপিবির তথ্য মতে, বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। মাসটিতে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ। পরের মাস জানুয়ারিতে ৪ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। মাসটিতে প্রবৃদ্ধি ৩৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। মার্চে বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়। মাসটিতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। ওই মাসে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করে আয় করে ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। এপ্রিলেও রপ্তানি আয় ছিলো ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার, ওই মাসে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ৫১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। তথ্য মতে, বছরের প্রথম চার মাস রপ্তানি আয় টানা ৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে থাকলেও পঞ্চম মাস মে’তে এসে তা ৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। আর মে মাসে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ছিলো ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। জুনে রপ্তানি আয় প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়ে ফেলে। মাসে পণ্য রপ্তানি হয় ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। এই মাসে প্রবৃদ্ধি ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ।
এদিকে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই জুলাই মাসে রপ্তানি আয় আবারও ৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে। মাসটিতে রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয় ৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। মাসটিতে প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগস্টে রপ্তানি আয় ৪ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার, মাসটিতে প্রবৃদ্ধি ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। বছরের টানা ৮ মাস রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সেপ্টেম্বরে তা নেতিবাচক ধারায় চলে যায়। মাসটিতে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি কম হয় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় ছিলো ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবরেও নেতিবাচক ধারায় ছিলো রপ্তানি আয়, মাসটিতে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মাসটিতে রপ্তানি আয় ছিলো ৪ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বছরের শেষ দিকে এসে নভেম্বরে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি হয়, মাসটিতে রপ্তানি আয় ৫ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার। একক মাস হিসাবে এটি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মাসটিতে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ২৬ দশমিক ০১ শতাংশ।
বছর ভিত্তিতে পণ্য রপ্তানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারে ক্লাবে বাংলাদেশ : চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে প্রথমবারের মতো দেশে থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ডিসেম্বরসহ এ আয় ৫৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বছরভিত্তিতে এবারই প্রথম বাংলাদেশ পণ্য রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এর আগে, ২০২১ সালে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করে ৪৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে পণ্য রপ্তানিতে আয় ছিলো ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, সে বছর পুরো বিশ্ব করোনা মহামারির ছোবলে আক্রান্ত ছিলো।
এদিকে, ২০১৯ সালে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয় ছিলো ৩৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮ সালে ৩৮ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৭ সালে ৩৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বছর ভিত্তিতে ২০২২ সালে বাংলাদেশ পণ্য রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারে ক্লাবে প্রবেশ করছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) দেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪৩ শতাংশ, যেখানে পুরো বিশ্ব থেকে তারা আমদানি করেছে মাত্র ২৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানই সবার উপরে। এছাড়া চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। পোশাক রফতানির শীর্ষে থাকা দুটি দেশের চেয়েই যুক্তরাষ্ট্রে বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের প্রবৃদ্ধি বেশি। দেশটিতে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে যেখানে বিশ্ব থেকে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৪.৬১ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশের বেশি।