নতুন বছরে ডিসিসিআই’র প্রত্যাশা

টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব জরুরি

প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

কোভিড মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিপর্যস্ত বিশ^ অর্থনীতির প্রভাব বাংলাদেশের ক্রমবর্ধনশীল প্রবৃদ্ধির গতিধারাকে কিছুটা স্থবির করলেও, আমাদের উদ্যোক্তাদের উদ্যোগী মনোভাব, সরকারি-বেসরকারিখাতের যৌথ প্রচেষ্টা আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে অনেকাংশে আশাবাদী করে তুলেছে। ২০২৩ সালে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে আরো তরান্বিত করতে রপ্তানিমুখী উৎপাদনশীল শিল্পখাতে নিরবিচ্ছিন্ন ও সহনীয় মূল্যে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, সহজে ব্যবসায় পরিচালনার পরিবেশ উন্নয়ন, ব্যবসায় পরিচালন ব্যয় হ্রাস, স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষনে সহায়ক অবকাঠামোগত পরিবেশ উন্নয়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত নির্ধারণ, সিএমএসএমই’র জন্য ঋণপ্রাপ্তি সহজীকরণ এবং মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করার জন্য ডিসিসিআই সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি-নির্ভর উৎপাদনমুখী শিল্প পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রতিযোগী সক্ষমতায় আমরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি।

ডিসিসিআই মনে করে, জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে ‘প্রেডিক্টেবল প্রাইসিং পলিসি’ অনুসরণ করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে দ্রুত নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে আরো জোরদার, দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি এবং আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এছাড়া শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা আবশ্যক এবং সরকারকে এর উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন প্রভৃতি বিষয়সমূহ দেশের আর্থিক খাতকে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, যার ফলে স্থানীয় রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য জ্বালানি, শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও সাপ্লাই চেইনের উপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে প্রণোদনার উপর আরো জোর দেয়া প্রয়োজন। একই সাথে প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটাতে কারেন্সি সোয়াপের বিষয়টিতে আগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা যেতে পারে।

এছাড়া আর্থিক খাতে তারল্য সংকট মেটাতে সরকারের ঋণ নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কার্যক্রম ও অন্যান্য সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধন, প্রকল্প বাস্তবায়ন দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে এ খাতে সংকট কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে বলে মনে করে, ডিসিসিআই। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ও কাঙ্খিত মাত্রায় রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় সরকারকে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক থেকে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি হারে ঋণ নিতে হচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি স্থানীয় উৎপাদন খাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাস পেতে পারে।

উল্লেখ্য, বেসরকারিখাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ঋণ প্রবাহ বিঘিœত হলে স্থানীয় বিনিয়োগ কমে আসতে পারে, সেই সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজস্ব আহরণের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ অটোমেশন, বিদ্যমান রাজস্ব আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও যুগোপযোগীকরণ এবং রাজস্ব আহরণের নতুন নতুন খাত সৃষ্টি করে করজাল বৃদ্ধির উপর জোরারোপ করেছে, ঢাকা চেম্বার। এক্ষেত্রে বিদ্যমান করদাতারা যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়টিতে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রপ্তানির প্রবৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখতে রপ্তানির সম্ভাবনাময় বাজারগুলোতে দেশীয় পণ্যের প্রবেশাধিকার আরো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে বিভিন্ন দেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, একই সাথে বিভিন্ন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোটসমূহের সাথে এফটিএ স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে ডিসিসিআই। এলডিসি হতে উত্তরণের এই ট্রানজিশনাল সময়ে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় যথাযথ ও উপযুক্ত প্রস্তুতি প্রয়োজন। রপ্তানিপণ্যের বহুমুখীকরণ, নিরবিচ্ছিন্ন শিল্প উৎপাদন, স্থানীয় শিল্পকে শক্তিশালীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পকে সম্প্রসারণ, উচ্চ প্রবৃদ্ধির রপ্তানি সম্ভাবনাময় খাত ও বাজারের উপর গুরুত্ব প্রদান, কর ও ট্যারিফ কাঠামোর সংস্কার, উত্তরণ পরবর্তী সময়ে যাতে বিদ্যমান ‘ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট মেজারর্স (আইএসএম)’ বজায় রাখা যায়, তা আদায়ে দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক নেগোসিয়েশন চালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি একান্ত জরুরি।