বিশ্ববাজারে নতুন দিগন্তের সূচনা

আমেরিকার সিইএস ফেয়ারে ওয়ালটন

প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জমকালো টেক ইভেন্ট ‘কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শো (সিইএস)-২০২৩’। আমেরিকার লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিতব্য সর্ববৃহৎ এই প্রযুক্তি মেলায় যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটন। সিইএস ফেয়ারে বিশ্বের বড় বড় টেক জায়ান্টগুলো তাদের প্রযুক্তির উৎকর্ষতা উপস্থাপন করে থাকে। অন্যতম শীর্ষ গ্লোবাল ব্র্যান্ডের অগ্রযাত্রায় ওয়ালটন এই মেলায় যুগান্তকারী উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবে। উপস্থাপন করবে আগামী প্রজন্মের সর্বাধুনিক ফিচারের নানান প্রযুক্তিপণ্য। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন শিল্প খাতের জন্য এটি বিশাল মাইলফলক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের জন্য অপার সম্ভাবনার নতুন এক দিগন্তের সূচনা ঘটবে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আমেরিকা শাখা) নায়েম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দিচ্ছে। আর আন্তর্জাতিক ফেয়ারগুলো এই অর্থনৈতিক কূটনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। সেক্ষেত্রে সিইএস অবশ্যই একটি ভালো প্লাটফর্ম। বাংলাদেশ থেকে ওয়ালটন প্রথমবারের মতো এই প্লাটফর্মে অংশ নিতে যাচ্ছে এটি সুসংবাদ। আমরা প্রতিনিয়ত বিশ্ব দরবারে দেশকে তুলে ধরার প্রয়াসে কাজ করছি। ইতিবাচক কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ে জোর দিচ্ছি। এ ধরনের একটি প্লাটফর্মে ওয়ালটন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে। এ আয়োজনে ওয়ালটনের সফলতা এবং মঙ্গল কামনা করছি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভিউল্যুশনে ওয়ালটনের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের ইলেকট্রনিক্স খাতে ওয়ালটন যে অবদান রাখছে, তা বাংলাদেশের জন্য সত্যিই গর্বের। ওয়ালটন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। ওয়ালটন তাদের পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে শাখা প্রশাখার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে। ওয়ালটনের সিইএস ফেয়ারে অংশগ্রহণের ফলে ইলেকট্রনিক্স খাতে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক সাহায্য করবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আবদুর রহিম খান বলেন, ইউরোপের কয়েকটি দেশে আমাদের দেশ থেকে ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে। লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিতব্য কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শো বা সিইএস-২০২৩ আমেরিকার বাজারে ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানির জন্য একটি ‘নকিং ডোর’ হতে পারে। এই ফেয়ারে ওয়ালটন আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে এটি অবশ্যই সুসংবাদ। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ রকম আরো সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছি।

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি.’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও গোলাম মুর্শেদ বলেন, বিশ্ব প্রযুক্তিপণ্য খাতের ফ্ল্যাগশিপ ট্রেড শো ‘সিইএস’ এ ওয়ালটন প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অংশগ্রহণ করছে। যেখানে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত আগামী প্রজম্মের সর্বাধুনিক ফিচারের উদ্ভাবনী প্রযুক্তিপণ্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা হবে। এটি শুধু ওয়ালটনেরই নয়; বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন শিল্প খাতের জন্যও এক বিশাল মাইলফলক। এর মাধ্যমে বিশ^দরবারে প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন খাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে, অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে। ওয়ালটন টিভির চিফ বিজনেস অফিসার ও সিইএস মেলার সমন্বয়ক প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন জানান, ওয়ালটনের ভিশন ‘গো গ্লোবাল ২০৩০’ অর্জনের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই তারা ‘সিইএস’ এ অংশ নিয়েছেন। মেলার ১৭৯২৮ নাম্বার প্যাভিলিয়নটি ওয়ালটনের। তিনি সবাইকে ‘সিইএস’ ফেয়ারে ওয়ালটনের জায়ান্ট প্যাভিলিয়ন পরিদর্শনের আহ্বান জানান।

জানা গেছে, প্রযুক্তি খাতের মেগা শো সিইএস হচ্ছে বিশ্বসেরা উদ্ভাবকদের মিলনমেলা। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই মেলায় নতুন উদ্ভাবনী পণ্য ও ধারণা প্রদর্শনের পাশাপাশি প্রযুক্তি খাতের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডগুলো নতুন ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ পায়। যুক্তরাষ্ট্রের সুপরিচিত প্রদর্শনী কেন্দ্র ‘লাস ভেগাস কনভেনশন সেন্টার’ এ ২.৬ মিলিয়নেরও বেশি বর্গফুট জায়গাজুড়ে এ মেলার আয়োজন করেছে কনজ্যুমার টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশন (সিটিএ)। চলতি বছর ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এ মেলা চলবে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এবারের মেলায় প্রযুক্তি খাতের খ্যাতনামা গ্লোবাল ব্র্যান্ডসহ সাড়ে ৪ সহস্রাধিক কোম্পানির অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শিত হবে। এতে ১৬০টিরও বেশি দেশের দেড় লাখ প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী, প্রযুক্তিবিদ, কনজ্যুমার টেকনোলজি সরবাহকারী ও ডেভেলপার অংশগ্রহণ করবে। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি পণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটন। তাই সিইএস ফেয়ারে ওয়ালটনের অংশগ্রহণকে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতের জন্য মাইলফলক বলে উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্টরা।