ডলার সংকটের প্রভাব দেশের অর্থানীতিতে চাপ বাড়িয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বেসরকারি খাতের ঋণে। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে আমদানি খচর ব্যাপকহারে বেড়েছে। গত বছরের নভেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ বেড়ে দাড়িয়েছে ১৪ লাখ ৬ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালে একই সময় এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৩৪ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এসবের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে, ডলার সংকট বেশ ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। এ সংকট সমাধানে সরকার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে। এতে রিজার্ভের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক শূন্য ৮৩ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদণ্ডে হিসাব করলে রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমে দাঁড়াবে ২৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরেও দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমেছে। নভেম্বর শেষে এই প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ; যা আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। সেই হিসাবে আগের মাস অক্টোবরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার কমেছে শূন্য দশমিক ৩১ পয়েন্ট। এর আগে জুনে এই হার ছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এদিকে, গত অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। সে হিসেবে আগের মাসের চেয়ে অক্টোবরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে। গত অক্টোবর মাসে দেশের বেসরকারি ঋণের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বেসরকারি ঋণ বেড়েছে ২৭ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের করা প্রাক্কলনের চেয়েও কম। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৪ দশমিক ১০ ভাগ। এর আগের অর্থবছর ২০২১-২০২২ এ প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ ভাগ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে তা ছিল অনেক কম। জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়েছিল ১১ শতাংশ। পরের মাসে ফেব্রুয়ারিতে খাতটিতে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে। এরপর মার্চে সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে। এরপর পরে দুই মাস বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ে। জুলাই মাসে হয় ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে এবং আগস্টে ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে প্রবৃদ্ধি আবারও কমা শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বরে বেসরকারি ঋণের প্রবিদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ আর অক্টোবরে তা দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ।