ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চীন সরকারের অর্পণকৃত শুল্কমুক্ত সুবিধা দেশের রপ্তানি সম্ভাবনা এবং পরিস্থিতি

চীন সরকারের অর্পণকৃত শুল্কমুক্ত সুবিধা দেশের রপ্তানি সম্ভাবনা এবং পরিস্থিতি

বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি ও দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ চীন বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার এবং কৌশলগত উন্নয়ন সহযোগী দেশ। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য অ্যাপারেল খাতসহ (তৈরি পোশাক) অন্যান্য পণ্য খাতের কাঁচামাল এবং ক্যাপিটাল মেশিনারিজের প্রধান যোগানকারী দেশ হচ্ছে চীন। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, কারিগরি সহায়তা এবং বিভিন্ন খাতে চীনা বিনিয়োগ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের FDI Gross Inflow হতে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে চীন হতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ এসেছে ৫২৫ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দেশের অর্থনীতির চাকা চলমান রাখার জন্য গুরত্বপূর্ণ ক্ষেত্র জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করেছে ২৫৬ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওই অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্র্র বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে ৬৭৫ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ।

চীন বাংলাদেশের বিগত ১০ বছরের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চীন হতে বাংলাদেশের আমদানি প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পায়নি বরং কমেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চীনে ৯৪৯ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। পরবর্তী বছরগুলোর রপ্তানি প্রবণতা বৃদ্ধি এবং হ্রাসের মধ্যে রয়েছে। দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য বাংলাদেশের প্রতিকূলে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এ পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ পার্থক্য যৌক্তিকভাবে গ্রহণযোগ্য কেননা ক্যাপিটাল মেশিনারিশ হতে বিভিন্ন রপ্তানি খাতের কাঁচামাল চীন হতে আমদানি করা হয়। এ ধরনের প্রতিকূল বাণিজ্য ভারসাম্য আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেডিং পার্টনার ভারতের সঙ্গেও রয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চীন সম্প্রতি বাংলাদেশকে ৯৮ শতাংশ ট্যারিফ লাইন পণ্যের (৯৮৩০ পণ্য) উপর শুল্কযুক্ত সুবিধা প্রদান করেছে। চীন কর্তৃক অর্পণকৃত ৯৮ শতাংশ ট্যারিফ লাইন পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধার ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের জন্য চীন একটি উদীয়মান বাজার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির কার্যকর কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ২০২১ সালে চীন সমগ্র বিশ্ব ২ দশমিক ৬৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানি করেছে ( সোর্স : ট্রেডম্যাপ, আইটিসি)।

চীনের প্রধান যোগানকারী দেশ/আমদানি অংশীদার দেশ হচ্ছে- তাইপে (চাইনিজ), কোরিয়া রিপাবলিক, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র। তাইপে (চাইনিজ) এবং কোরিয়া রিপাবলিক চীনের মোট আমদানির যথাক্রমে ৯ দশমিক ৩ এবং ৮ শতাংশ পূরণ করে। বাংলাদেশ যদি চীনের মোট আমদানির ১ শতাংশ দখল করতে পারে সেক্ষেত্রে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দাঁড়াবে ৩ (তিন) বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চীন বাংলাদেশের ১৭তম বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। বাংলাদেশ হতে চীনে যে সব পণ্য রপ্তানি হয় এর মধ্যে তৈরি পোশাক (নীট এবং ওভেন), চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্যসহ এইচএচ চ্যাপ্টার ৫৩ এর অন্যান্য পণ্য, কটন, ফুটওয়্যার, হিউম্যান হেয়ার, পরচুলা, পাখীর পালক দিয়ে তৈরি পণ্য, কৃত্রিম ফুল, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক পণ্য, ফুটওয়্যার, মাছ ও হিমায়িত খাদ্য এবং আয়রন স্টিল উল্লেখযোগ্য। আপটা (Asia Pacific Trade Agreement) চুক্তির অধীন চীন প্রথমে বাংলাদেশকে ৬১ শতাংশ ট্যারিফ লাইন পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করে। পরবর্তীতে ১ জুলাই ২০২০ এ চীন ৯৭ শতাংশ এবং ২০২২ সালের ১ সেপ্টম্বর হতে ৯৮ শতাংশ ট্যারিফ লাইনের উপর শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা অপর্ণ করে।

উল্লেখ্য, এ ধরনের বাজার সুবিধা ভিয়েতনাম, লাওস এবং ফিলিপাইনস ও পেয়ে আসছে। চীনে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের সুযোগের সদ্ব্যবহার আমাদের রপ্তানিকারকরা এখন পর্যন্ত নিতে পারেনি।

চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে লক্ষ্য মাত্রা এবং পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আলোচ্য সময়ে রপ্তানি হয়েছে ২৫৬ দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা পূর্ববর্তী সময়ে ২৮৯ দশমিক ৫৮ মিলিয়র ডলার ছিল। বাংলাদেশের রপ্তানি কাক্সিক্ষতমাত্রায় না হওয়ার জন্য আমাদের রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যায়নের অভাব,চীনা বাজারে প্রবেশের জন্য বিস্তৃত পরিকল্পনার অনুপস্থিতি, যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতা, চীনের শক্তিশালী উৎপাদন সামর্থ, কোভিড জিরো টলারেন্স এবং অন্যান্য রপ্তানি গন্তব্যের আকর্ষণীয় সুবিধাদিকে দায়ী করা যেতে পারে। চীন ২০২১ সময়ে বিশ্ব বাজার হতে ১০ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের তৈরি পোশাক পণ্য আমদানি করেছে। সে তুলানায় বাংলাদেশ হতে রপ্তানি করেছে ২৭১ দশমিক ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা চীনের মোট আমদানির ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। চীনের অ্যাপারেল খাতের বাজারের আয়তন ৩১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও অধিক এবং ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশে এর আয়তন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। হালকা শিল্প হতে দামীপণ্য উৎপাদনের দিকে মনোযোগী হওয়ায় বাংলাদেশের মতো উৎপাদনকারী দেশের জন্য চীন ইমার্জিং মার্কেট হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।বাংলাদেশের সমৃদ্ধ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের চীনের বাজারের আরও গভীরে প্রবেশের (Market Penetration) সুযোগ রয়েছে।এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য সেক্টর সংশ্লিস্ট রপ্তানিকারকদের উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সংস্থা বিজিএমইএ (BGMEA) ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য চীন একটি সম্ভাবনাময় বাজার হতে পারে । চীন আমাদের চামড়া খাতের জন্য একটি উর্বর বাজার হতে পারে। চীনের চামড়া খাতের আমদানি পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, চীন বিশ্বের প্রধান চামড়া আমদানিকারক এবং বিশ্ব বাজার হতে ২০২১ সালে ৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের চামড়া আমদানি করেছে যা মোট চামড়া আমদানির ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ ( সূত্র: আইটিসি ট্রেড ম্যাপ)।

২০২১-২২ অর্থ বছরে বাংলাদেশ চামড়া রপ্তানি করেছে ১১৯ দশমিক ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করেছে ৯৪১ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিভিন্ন ধরনের বেসিক চামড়াজাত পণ্য অর্পণকৃত ট্যারিফ লাইনে সংযুক্ত হওয়ায় এ খাতের রপ্তানি সম্ভাবনা অধিকতর বৃদ্ধি পেয়েছে।এ খাতের রপ্তানিকারকরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ জাপানের মতো সংবেদনশীল বাজারে রপ্তানি করছে। তাই চীনের কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন করে মার্কেট শেয়ার বৃদ্ধির করতে পারবে বলে আশা করা যায়। বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস চামড়া খাতের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের লক্ষে বাংলাদেশের রপ্তানিকারক এবং চীনা আমদানিকারকদের সমন্বয়ে Bangladesh Leather and Leather Products Promotion Webinar আয়োজন করেছে। Bangladesh Leather and Leather Products Promotion Webinar উক্ত আয়োজন সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করেছে। এ ধরনের Match Making সভা অব্যাহত থাকলে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি অন্বেষণ কার্যক্রম নিঃসন্দেহে ফলপ্রসু হবে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বান্ধব পণ্য ব্যবহারের সচেতনতা তৈরি হওয়ায় চীনে পাট ও পাট পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা গ্রহন করা যেতে পারে। ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের পাট পণ্যের উপর অ্যান্টিং ডাম্পিং শুল্ক আরোপের মেয়াদ আর পাঁচ বছরের জন্য অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে ।পাট ও পাটজাত পণ্যের বাজার বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে চীন একটি বিকল্প বাজার হতে পারে। চীনের শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধিসহ শিল্পায়ন অপেক্ষাকৃত ভারী এবং প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের দিকে ধাবিত হওয়ায় হালকা শিল্প সমূহ অন্যান্য বিনিয়োগ সম্ভাবনাময় দেশে স্থানান্তরিত হচ্ছে। চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে প্লাস্টিক, আইসিটি, ইলেকট্রিক্যাল কম্পোনেন্ট এবং অ্যাপারেল খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা গ্রহণ করা যেতে পারে। ইকোনমিক জোন এবং স্পেশাল ইকোনিক জোন সমূহে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য নানামুখী কার্যকর প্রসারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা সময়ের দাবী। চীনা কনজ্যুমারদের নিকট বাংলাদেশের ইলিশ মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং চীনা ব্যবসায়ীরা আমদানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি উপস্থাপন ও করেছে। দেশীয় চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে রপ্তানির বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য হতে পারে। Black Tiger হিসেবে পরিচিত বাগদা চিংড়ি সুস্বাদু মাছ হিসেবে যথেস্ট চাহিদা রয়েছে। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ সাশ্রয়ী দামে ভেনামি প্রজাতির চিংড়ি রপ্তানি করছে বিধায় বিশ্ব বাজারে ব্ল্যাক টাইগারের রপ্তানি চরমভাবে হ্রাস পেয়েছে। Black Tiger এর প্রিমিয়ার ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি এবং প্রতিযোগীতামূলক মূল্য ব্যতিত চীনের বাজারে প্রবেশ করা সম্ভব হবে না। ২০২১ সালে চীন বিশ্ব বাজার হতে ১৩.৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সতেজ ও হিমায়িত মাছ সহ অন্যান্য মাছ জাতীয় পণ্য আমদানি করেছে সেখানে বাংলাদেশের শেয়ার মাত্র ০ দশমিক ১ শতাংশ। এ কৌশলগত পরিকল্পনা গ্যাপ (Strategic Planning Gap) পূরণের জন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রমোশনাল কর্মকাণ্ড। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সমন্বয়ে সরকারের নীতিগত সহায়তা নিয়ে কৌশলগত পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই।

এছাড়া ভেজিটেবলস, ফলমূল, কাঁকড়া এবং ইল ফিসের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নীতিগত সুবিধাসহ HACCP ( Hazard Analysis Critical Control Point), Traceability, এবং GAP(Good Agricultural Practices) বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যম সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক। এছাড়া আমাদের দেশীয় কাঁঠাল এবং আমের প্রতি ও চীনা ব্যবসায়ীদের আগ্রহ রয়েছে। অন্যান্য সম্ভাবনাময় কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বাজার সম্ভাব্যতা যাচাই করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।এ ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন হর্টেক্স ফাউন্ডেশন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে । কৃষিজাত পণ্য এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী রপ্তানির বিষয়ে প্রতিপালনীয় কম্পপ্লায়েন্স বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সেক্টরের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে নলেজ শেয়ারিং সেশন (Knowledge Sharing Session) আয়োজনের বিষয়ে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের আগ্রহ রয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ চীনের সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বললে অত্যুাক্তি হবে না। চীন কর্তৃক অর্পনকৃত বিশেষ শুল্ক সুবিধা প্রাপ্তির জন্য রুলস অব অরিজিন এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ম্যানুয়েল এ ৩০টি অনুচ্ছেদ রয়েছে।

উপকারভোগী দেশ হতে উংপাদিত পণ্যের বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তির নির্ণায়ক পর্যালোচনায় দেখা যায়, Substantial Transformation এর ক্ষেত্রে রিজিওনাল ভেল্যু কনটেন্ট (আরভিসি) কমপক্ষে ৪০ শতাংশ হতে হবে। ৪০শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজনের (DVA) মাধ্যমে প্রতিযোগী মূল্যে রপ্তানির সক্ষমতা আমাদের অনেক রপ্তানি পণ্যের (প্রচলিত পণ্য (৭০ শতাংশ (DVA) এবং অপ্রচলিত পণ্য) রয়েছে। রপ্তানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মাঝে চীন সরকার কর্তৃক অর্পণকৃত শুল্ক সুবিধদি সম্বন্ধে সচেতনা সৃস্টির মাধ্যমে রপ্তানি প্রচেস্টাকে আরও বেগবান করা সম্ভব। ৯৮ শতাংশ ট্যারিফ লাইনের শুল্ক মুক্ত সুবিধা কাজে লাগিয়ে চীনের সম্ভাবনাময় বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য আমাদের পণ্য বহমুখীকরণের পাশাপাশি শীর্ষ স্থানীয় রপ্তানিকারকদের নিয়ে চীনে অনুষ্ঠিত আইকোনিক পণ্য ভিত্তিক সোর্সিং মেলা সমূহে অংশগ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা টার্গেট ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করার অন্যতম বিপণন হাতিয়ার এবং এ ধরনের প্লাটফরমে কার্যকরভাবে অংশগ্রহনের মাধ্যমে পণ্যের পরিচিতিসহ দেশ এবং সংশ্লিষ্ট খাতের ব্র্যান্ডিং মাধ্যমে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ করা সম্ভব। চীনে (সাংহাই, বেইজিং, গুয়াংজো, কুনমিং ছাড়াও অন্যান্য সম্ভাবনাময় ভেন্যু) একক দেশীয় পণ্য প্রদর্শনীর আয়োজনের মাধ্যমে খাত ভিত্তিক বাংলাদেশের উৎপাদিত মানসম্পন্ন পণ্যের পরিচিতি এবং ক্রেতা অন্বেষনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা যায়। পাশাপাশি চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বিনিয়োগ সুযোগ এবং সুবিধাদিকে প্রক্ষেপণ করে ট্রেড কনফারেন্স এর আয়োজন করা যেতে পারে। এ ধরনের ইভেন্ট সফলভাবে আয়োজনের জন্য প্রি-ফেয়ার মার্কেটিং এবং প্রমোশনাল কার্যক্রম পেশাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগসহ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে কার্যকরভাবে সম্পাদন করতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য একমাত্র জাতীয় সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ব্যবস্থাপনায় চীনে রপ্তানি বাজার উন্নয়নের জন্য নিয়মিতভাবে Shoes and Leather Fair,Guangzhou, China, China-South Asia Expo and China (Kunming) Import and Export Fair, Kunming Ges China International Import Expo (CIIE), Shanghai শীর্ষক মেলায় অংশগ্রহণ করা হচ্ছে । এ ছাড়া গত ৩ বছর ধরে China International Fair for Trade in Service (CIFTIS) শীর্ষক মেলায় অনলাইন/ভার্চুয়াল প্লাটফরম এ অংশগ্রহণ করছে। China International Import Expo (CIIE), Shanghai শীর্ষক মেলা চীনের সর্ব বৃহৎ মেলা এবং বিশ্বের প্রায় সকল দেশ দুইটি ক্যাটাগরীতে (১) কান্ট্রি প্যাভিলিয়ন এবং (২) এন্টারপ্রাইজিং) অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উংপাদিত পণ্য/সেবা সম্ভার নিয়ে অংশগ্রহণ করে। ২০১৮ হতে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত CIIE এ অংশগ্রহণকারী দেশের মধ্যে ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলে এ ধরনের ইভেন্টে সফল অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের সামর্থ্য উপস্থাপন করে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ করা সম্ভব। চীনের হাইপার মার্কেট এবং রিটেইলার্স (Retailers) এর সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাজে লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল ইউং এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে বাংলাদেশের রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য ঝুঁকিপূর্ণ।ফলে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনায় (পরিপ্রক্ষিত পরিকল্পনা এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা) পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ উদ্যোগের প্রতি গুরুতারোপ করেছে। চিন কর্তৃক অর্পণকৃত শুল্ক মুক্ত বাজার সুবিধা সদ্ব্যবহার করে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় তিন (৩) বিলিয়নে উন্নীত করা সম্ভব। ইতোমধ্যে ট্রেডিশনাল মার্কেট বহির্ভূত বাজার ভারত, কানাডা এবং জাপানে আমাদের রপ্তানি ১ বিলিয়নের গন্ডি অতিক্রম করেছে। এ ব্যতিত অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি আয় প্রায় এক (১) বিলিয়নের কাছাকাছি। পণ্য উন্নয়ন এবং বহুমুখীকরণের মাধ্যমে যথাযথ বিপণন কৌশল প্রণয়ন করে সরকারের সময়োপযোগী নীতিগত সহায়তায় চীন কর্তৃক ৯৮ শতাংশ ট্যারিফ লাইনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানির কৌশলগত পরিকল্পনা গ্যাপ হ্রাস পাবে তা দৃঢ়ভাবে বলা যেতেই পারে।

লেখক : পরিচালক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত