ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ৩২.৫৭ বিলিয়ন ডলার

* কমেছে আরও ১১২ কোটি ডলার
দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ৩২.৫৭ বিলিয়ন ডলার

দেশে ব্যাপকহারে চলছে ডলার সংকট। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ (রিজার্ভ) আরও কমেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১২ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ডলার। গত রোববার দিনশেষে তা সমন্বয় করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে রিজার্ভ গিয়ে ঠেকে ৪৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ। এরপর থেকে আকুর দায় পরিশোধ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রির ফলে রিজার্ভের ডলার কমতে থাকে। চলতি অর্থবছরের শুরুতেও রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৬০০ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর এই ছয় মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করা হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। নিট রিজার্ভ আরও ৮ বিলিয়ন ডলার কম, যা দিয়ে ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ৮ জানুয়ারি দিনশেষে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ২৫৭ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৩৬৩ কোটি ডলার।

আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। দায় পরিশোধের মতো রিজার্ভ না থাকায় গত অক্টোবরে আকু থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে শ্রীলঙ্কা। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর মানদণ্ড অনুযায়ী, বর্তমান রিজার্ভ থেকে আরও ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে। এতে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়াবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। সংস্থাটির মানদণ্ড অনুসারে, দেশের মজুদকৃত রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ঋণ এবং রিজার্ভ থেকে দেশীয় প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যয় বাদ যাবে। তবে সরকার এখন আইএমএফ এবং নিজস্ব অর্থাৎ দুই ধরনের হিসাবই রাখছে।

অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার ইতিবাচক ধারা ফিরিয়ে আনতে আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন আমদানিতে বাণিজ্যিক ঋণপত্র (এলসি) কমলেও আগের দায় পরিশোধে কিছুটা চাপের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি। গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসে আমদানি দায় পরিশোধ বেড়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। আর একই সময়ে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে। আমদানি দায় পরিশোধে গত বছর রিজার্ভ থেকে ১২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। আর ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল। করোনার প্রভাব আর রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে রিজার্ভ কমতে থাকে। সবশেষ রিজার্ভ ৩৩ থেকে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামার মধ্যে ছিল। অন্যদিকে রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আইএমএফের তহবিল থেকে সাড়ে ৪ বিরিয়ন ডলার ঋণ নেয়ার আলোচনাও চূড়ান্ত পর‌্যায়ে। তাছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকার বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন হলো বহুপক্ষীয় ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে একটি আন্তঃআঞ্চলিক চলতি লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ইরান ও মালদ্বীপ আকুর সদস্য। ডলার ও ইউরোর মাধ্যমে আকুর বিনিময় বা লেনদেন হয়ে থাকে। প্রতি দুই মাস পর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় পেমেন্ট করা হয়। আকুর চলতি লেনদেনের নিষ্পত্তি ছাড়াও ডলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও সরকারি আমদানিতে এলসি খোলার জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত