১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে ডিজেল এবং চিনি আমদানির দুটি প্রস্তাবও রয়েছে। গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির দ্বিতীয় সভায় প্রস্তাবগুলোয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, আজকে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ২০২৩ সালের দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুমোদনের জন্য ১০টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের তিনটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের দুটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি, স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১০টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১৯ হাজার ৫০০ কোটি ৭৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫৬২ টাকা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দশম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সভায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার মে. টন ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবের অনুমোদনও মিলেছে। প্রতি মে. টন ইউরিয়া সারের দাম পড়বে ৪৭০ মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে চিনি বিক্রির লক্ষ্যে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি আন্তর্জাতিকভাবে জরুরিভিত্তিতে ক্রয়ের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান শ্রীনোভা ইস্পাত প্রাইভেট লিমিটেড, কলকতা স্থানীয় এজেন্ট : এলআইডি, ঢাকার কাছে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে প্রতিষ্ঠানটি দরপ্রস্তাব জমা দেয়। প্রস্তাবটি পরীক্ষা শেষে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি মে. টন ৫৩২ মার্কিন ডলার হিসেবে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ৭০ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি চিনির মূল্য ৫৯.৭৪।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ঢাকা ওয়াসার ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-০৩.১ এর আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে (১) এসটিসি; (২) সিউরেকা; (৩) সদেব এবং (৪) দেব কন কে ৬৭ কোটি ৭৬ লাখ ৩ হাজার ২৯০ টাকায় নিয়োগের ক্রয়ের চুক্তি করা হয় যার মেয়াদ ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখ (৪৬ মাস) শেষ হয়। পূর্ত কাজ বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২.৬৬ মাস বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২৪ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার ৪৭৬ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টেকনিকাল অ্যাসিসট্যান্স ফর রেলওয়ে কানিক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এর আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশ রেলওয়ের ১১টি উপ-প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ নকশা প্রণয়নের জন্য প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের লক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে আরএফপি ইস্যু করা হলে চারটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে তিনটি প্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) ওসিজি, জাপান; (২) ইজিআইসি, ফ্রান্স (৩) এইচএসএস, মালয়েশিয়া এবং (৪)এসও দেব কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, বাংলাদেশকে নিয়োগ দেয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ১৯৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৮ হাজার ৫০৬ টাকা।
তিনি বলেন, ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ সময়ে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)’র ২০২৩ সালের পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর তারিখের সিসিইএ’র সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর সময়ে মেয়াদি চুক্তির আওতায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেডের সাথে নেগোসিয়েশনের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৫ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৪৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল (প্রিমিয়াম) ৫.৫০ মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে মেয়াদি চুক্তির আওতায় জি-টু-জি ভিত্তিতে নেগোসিয়েশনকৃত বিভিন্ন দেশের ৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ের জন্য ২০ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করবে। এই জ্বালানি তেলের প্রিমিয়াম ও রেফারেন্স প্রাইসসহ ব্যয় হবে ১৭০ কোটি ৪৭ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮ হাজার ২১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ)’ প্রকল্পের লট-১ এর আওতায় ৬ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার কন্ডাক্টর অ্যান্ড ওয়্যার (বেয়ার) ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ‘বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং এ-১১, লট-১ এর আওতায় ৬ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার কন্ডাক্টর অ্যান্ড ওয়্যার (বেয়ার) ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ছয়টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে চারটি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান বিআরবি ক্যাবলস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে ৬ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার কন্ডাক্টর অ্যান্ড ওয়্যার (বেয়ার) ক্রয়ে ব্যয় হবে ৬৭ কোটি ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯০ টাকা।
তিনি জানান, ‘বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ)’ প্রকল্পের লট-২ এর আওতায় ৬ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার কন্ডাক্টর অ্যান্ড ওয়্যার (বেয়ার) ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিআরবি ক্যাবলস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এই কন্ডাক্টর অ্যান্ড ওয়্যার (বেয়ার) সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৬৭ কোটি ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯০ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ)’ প্রকল্পের লট-৩ এর আওতায় ১,২০০ কিলোমিটার কন্ডাক্টর অ্যান্ড ওয়্যার (বেয়ার) ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। প্রকল্পের প্যাকেজ নং জি-১১, লট-৩ এর আওতায় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে চারটি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান বিআরবি কেবল লিমিটেডের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার কন্ডাক্টর অ্যান্ড ওয়্যার (বেয়ার) সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য ব্যয় হবে ১৮ কোটি ৬৭ লাখ ১৪ টাকা।