দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ায় উচ্চ দামে কিনতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের তেল। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময় পর্যন্ত সরকার ৭ দেশের ৮টি সংস্থা থেকে ২০ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। তবে কোনো কোনো জ্বালানি তেল তিনগুণেরও বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। জ্বালানি তেল আমদানির পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছিল ১৪ লাখ ৯০ মেট্রিক টন। এজন্য মোট ব্যয় হয়েছিল ৮ হাজার ৪১৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল গ্যাস ওয়েল ৩.১৫ মার্কিন ডলার, জেট এ-১: ৪. ১০ ডলার, মোগ্যাস ৪.৯২ মার্কিন ডলার। প্রতি মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল ২৫.৬৮ মার্কিন ডলার এবং মেরিন ফুয়েল ৪২ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হয়েছে।
সরকার ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য ৮টি দেশের ৮ প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ২০ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করবে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিএসপি, ইন্দোনেশিয়া; ইএনওসি, আরব আমিরাত; আওসিএল, ভারত; পেট্রোচিন, চায়না; পিটিএলসিআই, মালয়েশিয়া, পিটিটিটি, থাইল্যান্ড; ইউনিপেক, চীন। দেশগুলো থেকে গ্যাস অয়েল আমদানি করা হবে গ্যাস অয়েল ১৩,৫০,০০০ মেট্রিক টন; জেটএ-২: ১,৮০,০০ মেট্রিক টন; মোগ্যাস ২,০০,০০০ মেট্রিক টন; ফার্নেস অয়েল ২,৫০,০০০ মেট্রিক টন এবং ফর্নেস অয়েল ৬০ হাজার মেট্রিক টন। প্রিমিয়াম এবং রেফারেন্স মূল্যসহ গ্যাস অয়েল আমদানিতে ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৪৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা, জেটএ-১ কিনতে ব্যয় হবে ১৮২৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ফার্নেস অয়েল কিনতে ব্যয় হবে ১ হাজার ১৭১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, মোগ্যাস কিনতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৭৬৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং মেরিন ফুয়েল কিনতে ব্যয় হবে ৪০২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ে মোট ২০ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ২১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
এদিকে ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় ১৬ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৬৪৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল গ্যাস অয়েল ৯.৮৩ ডলার, জেটএ-১ তেল ১১.৩৬ মার্কিন ডলার, ফার্নেস অয়েল ৪৪.৯৮ মার্কিন ডলার, মোগ্যাস ৭.২৫ মার্কিন ডলার এবং মেরিন ফুয়েল ৬০.৯৮ মার্কিন ডলার।
গত বছরের জ্বালানি তেল আমদানি ব্যয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জানুয়ারি-জুন সময়ের চেয়ে জুলাই-ডিসেম্বরে প্রতি ব্যারেল গ্যাস অয়েল কিনতে বেশি ব্যয় হয়েছে ৬.৬৮ মার্কিন ডলার, জেটএ-১ প্রতি ব্যারেলে বেশি খরচ হয়েছে ৭.২৬ মার্কিন ডলার, প্রতি ব্যারেল মোগ্যাসে বেশি ব্যয় হয়েছে ২.৩৩ মার্কিন ডলার। আর ফার্নেস অয়েলে প্রতি মেট্রিক টনে ১৯.৩ মার্কিন ডলার আর প্রতি ব্যারেল মেরিন ফুয়েলে বেশি লেগেছে ১৮.৯৮ ডলার।
দাম বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেই সরকার ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির টার্গেট নির্ধারণ করে দ্রুত সময়ের মধে?্য বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে ২০ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ২১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০২২ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ের সঙ্গে ২০২৩ সালের একই সময়ে প্রতি ব্যারেল গ্যাস অয়েলের দাম বেড়েছে ৯.৮ ডলার, মোগ্যাসের দাম বেড়েছে ৮.০৮ ডলার, জেটএ-১: দাম বেড়েছে ৯.৫৮ ডলার। অন্যদিকে প্রতি মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েলে ৩৬.০৭ ডলার এবং মেরিন ফুয়েলে দাম বেড়েছে ৩২.৫০ মার্কিন ডলার।
এছাড়া, ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকেও সরকার ডিজেল আমদানি করে থাকে। ২০২২ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে ৯০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করে। এতে ব্যয় হয় ৫১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। চলতি ২০২৩ সালেও ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ৫৪৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২২ সালে যে দামে ৯০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করেছিল তার চেয়ে বেশি দামে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করতে হচ্ছে। ২০২২ সালে প্রতি মেট্রিক টনের গড় মূল্য ছিল ৫৬ হাজার ৯৪২ টাকা আর ২০২৩ সালে প্রতি মেট্রিক টনের গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৮৪০ টাকা।