বৈদ্যুতিক অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে ক্যাবলসে টেস্ট জালিয়াতি

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

রাজধানীসহ সারা দেশে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ক্যাবলস ব্যবহারের আগে মান পরীক্ষায় টেস্ট জালিয়াতি, সিস্টেম লস, অগ্নিকাণ্ড আর জানমালের ক্ষয়ক্ষতিসহ ভয়ানক পরিণতি সৃষ্টি করছে। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এড়াতে ক্যাবলসের মান পরীক্ষায় নজর দেয়া খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ক্যাবলস প্রয়োজন পড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হওয়ার কারণে অনেকেই সেটি টেস্ট করে নেয়। এজন্য বিভিন্ন ল্যাব এবং কেউ কেউ বুয়েটের দারস্থ হন। অন্যদিকে দরপত্রের মাধ্যমে ক্যাবলস ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোয়ালিটি সঠিক রাখতে উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং টেস্টের ধরন উল্লেখ করে থাকে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সাথে যোগসাজশ করে এই দুই ক্ষেত্রেই জালিয়াতি করে থাকে, যার ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উচ্চমাত্রার ভোল্টেজ ক্যাবলস টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এদেশে না থাকলেও এটি উৎপাদনে প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও এর মান অনুমান করা যায়। কিন্তু সেখানেও দুর্নীতিও জালিয়াতি চক্র সর্বজন সমাদৃত এবং সুশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত বুয়েটকে পর্যন্ত পক্ষপাতে প্রভাবিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্যাবলস সরবরাহকারী ও উৎপাদনকারী বিশেষজ্ঞ কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেন, উচ্চমানের ও ভোল্টেজের ক্যাবলস টেস্টের জন্য বুয়েটে প্রয়োজনীয় ইক্যুয়েপমেন্ট নেই। অন্যদিকে বুয়েট কিছু টেস্ট বাইরে থেকে করে এনেও নিজেদের প্যাডে নিজেদের টেস্ট বলে ছাড়পত্র দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।

কিছুদিন আগে পলি ক্যাবলস কোম্পানির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সিসিভি জালিয়াতির অভিযোগ উঠলে বুয়েট প্রায় কোটি টাকা স্পন্সর পাবার সূত্র ধরে এদের উচ্চতর ভোল্টেজের ক্যাবলস ভেটিংয়ে কৌশলী রেজাল্ট দেওয়ার পর পক্ষপাতিত্বের সমালোচনায় পড়ে বুয়েটের ট্র্রিপলই বিভাগ। অনেকেই বলেছেন, এদের যদি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকে, তবে টেস্ট রেজাল্ট বা প্রত্যায়নে স্বচ্ছতা বজায় থাকে না।

অন্যদিকে ক্যাবলস’র মান সমুন্নত রাখতে প্রাকটিক্যাল টেস্টের জন্য শর্টসার্কিট ক্যালকুলেশনে স্পেসিফিকেশন উল্লেখ থাকে। তথ্য মতে, আরইবি, ডিপিডিসি, পিডিবি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে ক্যাবলস’র মান পরীক্ষায় সিসিভি লাইনে তৈরির পাশাপাশি শর্টসার্কিট ইন্ট্রোডিইসিং টাইম বেশিরভাগ সময় দেয়া থাকে সাধারণত তিন সেকেন্ড। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ঠিক রাখতে ১১ কেভিএ ক্যাবলস টেস্ট করতে হবে ৬৬ কেভিএ দিয়ে এবং ৩৩ কেভিএ ক্যাবলস টেস্ট করতে হবে ৯১ কেভিএ দিয়ে।

জানা গেছে, জালিয়াতি চক্র বিভিন্ন সেক্টরে পিডিকে ম্যানেজ করে এই ভোল্টেজ সহ্য ক্ষমতা ৩ সেকেন্ডের জায়গায় ১ সেকেন্ড জায়েজ করে নিচ্ছে। ১ সেকেন্ডে ড্রপ করা বৈদ্যুতিক ক্যাবলস এবং ৩ সেকেন্ডে ড্রপ করা সরঞ্জামের দাম এবং মানে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। বৈদ্যুতিক ক্যাবলসের মান টেস্টের ফাঁকিবাজি ও জালিয়াতির কারণে সারা দেশে জানমালের ক্ষতির বিশাল ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে আরইবির প্রজেক্ট ডিরেক্টর রহিম মল্লিক বলেন, ‘আমরা সিসিভি লাইনে তৈরি হওয়া কোম্পানি থেকেই এ ধরনের ক্যাবলস সরবরাহ নিয়ে থাকি এবং টেস্টও হয়ে থাকে ঠিকমতো। ’

বুয়েটের ট্রিপল-ই বিভাগের সদস্য কামরুল হাসানকে তাদের বিভাগে প্রয়োজনীয় টেস্ট ইকুয়েপমেন্ট নেই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ নিয়ে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি। বর্তমান অবস্থা জানতে তিনি ট্রিপল-ই বিভাগের প্রধানের সাথে কথা বলতে বলেন। অন্যদিকে ট্রিপল-ই বিভাগের প্রধান আইনুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে ‘সব ইকুইপমেন্টতো নেই’ বলে এ নিয়ে লিখিত জানতে চাওয়ার কথা বলেন। অন্যত্র থেকে টেস্ট করে নিজেদের টেস্ট বলে প্রত্যায়নের কথা বললে তিনি এ নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।