ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ক্যাশলেসের আওতায় মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

* ক্যাশলেস বা নগদবিহীন বাংলাদেশ প্রচারণার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর * এখন এক ব্যাংকের কিউআর কোড থাকলে যে কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করা যাবে
ক্যাশলেসের আওতায় মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। এখন আর উচ্চবিত্তরাই কার্ডে বা মোবাইল ব্যাংকিং এ লেনদেন করছেন না; মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তরাও ক্যাশলেসের আওতায় এসেছে। অর্থাৎ, ক্যাশলেসের আওতায় এসেছে মতিঝিলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। গতকাল বুধবার ক্যাশলেস বা নগদবিহীন বাংলাদেশ প্রচারণার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সর্বসাধারণকে কিউআর কোডের পেমেন্টসহ সব ডিজিটাল লেনদেনের সুফল সম্পর্কে জানাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রচারণার স্লোগান- ‘সর্বজনীন পরিশোধ সেবায় নিশ্চিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ’।

এই সেবা চালু হওয়ার পর থেকে রাজধানীর মতিঝিলে চর্মকারের দোকান, ফলের দোকান ও চায়ের স্টলেও কিউআর কোডের মাধ্যমে পেমেন্ট নেয়া শুরু হয়েছে। এদিকে কিউআর কোড বা ক্যাশলেস পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ে মতিঝিল এলাকার পেয়ারা বিক্রেতা মোহাম্মদ শহীদ বলেন, এটা আমাদের জন্য খুব ভালো হইছে। অনেক সময় দেখা যায় ক্রেতার সঙ্গে খুচরা ১ থেকে ২ টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়। এখন এই পদ্ধতি চালু হওয়ায় খুচরা টাকা নিয়ে আর ঝামেলা হবে না। তবে টাকা ওঠানোর সমস্যা ঝামালে না হলে আর সমস্যা নেই। এছাড়া মোবাইলে পেমেন্ট হলে ছেড়া টাকা নিয়ে আর কোনো চিন্তা করতে হবে না। ফুটপাতের কোলঘেঁষে উপরে ছাউনি টানিয়ে ছোট্ট দোকান নিয়ে বসেছেন চর্মকার শাপলা। সামনে ছোটোখাটো একটি বাক্সে সাজানো বিভিন্ন রঙের কালি, তুলি ও জুতার সোল্ড। শাপলার দোকান থেকে কেউ জুতা পলিশ করাচ্ছেন, কেউ কেউ জুতার ছিঁড়ে যাওয়া অংশ মেরামত করাচ্ছেন।

দোকানটির কিছুটা সামনে যেতেই চোখে পড়ল বাক্সের ওপর রাখা মোবাইল ব্যাংকিং রকেটের কিউআর কোড। সেবা নিয়ে শাপলাকে এই কিউআর কোডের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করছেন ভোক্তারা। প্রথমবার দেখে বোঝার উপায় নেই কিউআর কোডের মাধ্যমে দোকানের ক্রেতাদের সঙ্গে লেনদেন করছেন শাপলা। তাইতো চলার পথে পেছন ফিরে তাকিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।

এদিকে রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীদের উদ্দেশে, ‘স্যার জুতা পলিশ করেন...নগদ টাকা দিতে হবে না। কিউআর কোডের মাধ্যমে টাকাটা আমাকে মোবাইলের দিয়ে দিলেই হবে। এখন আর খুচরা টাকা নিয়ে ঝামেলা নাই স্যার। কাজ শেষে মোবাইলে টাকা দিয়ে চইলা যাবেন।’ এভাবে সেবা নেয়ার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন শাপলা।

মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনের সামনের ফুটপাতে দীর্ঘ বছর ধরে জুতা পলিশ করে আসছেন শাপলা। ক্যাশলেস পেমেন্ট পদ্ধতি নিয়ে শাপলা বলেন, আগে জুতা কালি কইরা মানুষ হাতে টাকা দিত। ওই সময় খুচরা টাকা না থাকলে জুতা কালি করার পরও কম টাকা নেয়া লাগত। এহন আর খুচরা টাকার ঝামেলা নাই। কালি করা শেষে মোবাইলে টাকা দিইয়া কাস্টমার চইলা যাইব, আর সঙ্গে সঙ্গে আমার বিকাশে টাকা আইয়া পড়ব। এইটা ভালোই হইছে, কামের ট্যাকাডা মোবাইলে জমা থাকব, এতে বাড়তি খরচ কিছুটা কমব। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একজন ক্রেতা তাকে মোবাইলে পেমেন্ট করেছে বলেও জানান শাপলা। শাপলার পাশেই জুতা পলিশের দোকান রয়েছে রাকেশের। সেই দোকানেও এখন কিউআর কোডের মাধ্যমে পেমেন্ট সিস্টেম চালু হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, এতদিন একটি ব্যাংকের কিউআর কোডে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের গ্রাহক পেমেন্ট করতে পারত। এখন এক ব্যাংকের কিউআর কোড থাকলে যে কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করা যাবে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, ধরেন চা দোকানির ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। ওই দোকানদার তো ইসলামী ব্যাংকের কিউআর কোড দেবেন। এখন আপনি চা-বিস্কুট খেয়ে বিল দেবেন। কিন্তু আপনার অ্যাকাউন্ট ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে। এখন কী করবেন? এটার সমাধান দেবে সর্বজনীন বাংলা কিউআর কোড। এখান থেকে যে কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করতে পারবেন। অর্থাৎ, দোকানদারকে তার চায়ের বিল ডাচ্-বাংলা কিউআর কোডে সরাসরি পরিশোধ করতে পারবেন।

গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাশলেস সর্বজনীন বাংলা কিউআরভিত্তিক লেনদেনের এই উদ্যোগের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। প্রথমে ১০টি ব্যাংক এ কার্যক্রমে যুক্ত হবে। দেশব্যাপী এ কার্যক্রম চলবে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানও এ সঙ্গে যুক্ত থাকবে। বাংলা কিউআর কোডে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে এ উদ্যোগে যেসব ব্যাংক যুক্ত হয়েছে এগুলো হলো- ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, পূবালী ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক। এছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ, এমক্যাশ, রকেট ও কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড, ভিসা ও অ্যামেক্স এ সেবায় যুক্ত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনের সামনের ফুটপাতে এ চিত্র দেখা যায়।

জানা গেছে, বুধবার থেকে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সেবা নিতে বা পেতে শুধুমাত্র একটা ব্যাংকের অ্যাপ থাকলেই চলবে। অ্যাপে বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে সব ব্যাংকের গ্রাহক পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। এছাড়া বিকাশ, এমক্যাশ, রকেটের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অ্যাপ দিয়েও পণ্যের মূল্য পরিশোধ করা যাবে।

কিউআর পেমেন্ট কী?

কিউআর এর পূর্ণরূপ হচ্ছে কুইক রেসপন্স। এটি একটি কন্টাক্টলেস পেমেন্ট পদ্ধতি, যেখানে কিউআর কোডটি মোবাইল অ্যাপে স্ক্যান করে দ্রুত, সহজ ও সুলভ লেনদেন করা যায়।

কীভাবে করবেন কিউআর পেমেন্ট?

* মোবাইলে আপনার ব্যাংক/এমএফএস/পিএসপি’র অ্যাপ ডাউনলোড করুন

* ব্যাংক/এমএফএস/পিএসপি’র অ্যাপে পিন টাইপ করে লগ ইন করুন

* দোকান বা মার্চেন্ট আউটলেট প্রদর্শিত কিউআর কোড স্ক্যান করুন

* পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ করার জন্য টাকার পরিমাণ লিখুন ৫. পিন/ওটিপি টাইপ করে লেনদেন সম্পন্ন করুন

* লেনদেন সম্পন্ন হবে এবং পেমেন্টের কনফার্মেশন ও ডিজিটাল রিসিট পাবেন

কিউআর পেমেন্ট কেন করবেন?

ক্রেতার সুবিধা :

* পেমেন্ট করতে নগদ অর্থের প্রয়োজন হয় না।

* ক্রেডিট/ডেবিট/প্রিপেইড কার্ড সঙ্গে না থাকলেও ব্যাংক/এমএফএস/পিএসপি’র অ্যাপের সঙ্গে পূর্বে সংযুক্ত কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করা যায়।

* ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা এমএফএস ওয়ালেটের মাধ্যমে পেমেন্ট করা যায়।

বিক্রেতার সুবিধা :

* নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয় না বিধায় ছেঁড়াফাটা বা জাল নোট গ্রহণের আশঙ্কা থাকে না।

* কিউআর’র ইনস্টলেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ অনেক কম।

* বড় বিক্রেতাদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিক্রেতারাও কম খরচে কিউআর ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার মূল্য গ্রহণ করতে পারবেন

আপনার অ্যাকাউন্টের পিন নাম্বার/ওটিপি কখনো কারও সঙ্গে (এমনকি আপনার ব্যাংক/এমএফএস) শেয়ার করবেন না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত