এক সময় শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জেই আমের বাণিজ্যিক চাষ হতো। এরপর রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোয় চাষ হতে শুরু করে। এখন সাতক্ষীরা ও পার্বত্য জেলাগুলোসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আমের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে। এ তথ্য জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার। গতকাল রোববার রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন ও অবহিতকরণ কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী ও বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস। কর্মশালায় ‘কোয়ালিটি এসুরেন্স অব ম্যাংগো ফর বুষ্টিং এক্সপোর্ট’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পিএসও ড. মো. আতিকুর রহমান। উৎপাদনকারীদের পক্ষে ইসমাইল খান শামিম, বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস এন্ড এলাইড প্রোডাক্টস এসোসিয়েশনের এডভাইজার মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি কম হওয়া স্বাভাবিক উল্লেখ করে কৃষি সচিব বলেন, কিন্তু অনেক আম নষ্টও হয়। একসময় বিশ্বের দেশগুলোর কাছে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ছিল অতিমারি, দারিদ্রতা ও দুর্ভিক্ষের দেশ। কিন্তু গত ১৫ বছরে এ চেহারা বদলে গেছে। দেশে ২৫ লাখ টন আম উৎপাদন হলেও মাত্র ১৬০০টন রপ্তানি হয়। দেশের মানুষের চাহিদাপূরণ করতে হয় একারণে রপ্তানি কম হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, অনেক আম নষ্ট হয়। বিদেশে আম পাঠাতে হলে আম দেখতে যেমন সুন্দর হতে হবে তেমনি আমের বাইরের অংশ জীবাণুমুক্ত থাকতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘দেশে এখন প্রতিটি বাড়িতে মানসম্মত আম উৎপাদন হচ্ছে। আমের বাজার অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। আমাদের চাহিদাপূরণ করে এখন বিদেশেও রপ্তানি শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য এখন কিভাবে রপ্তানি বাড়ানো যায়। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে আম রপ্তানিও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হবে। উন্নত কৃষি চর্চা বা গ্যাপের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, ‘থাইল্যান্ডের পাশে চীন। আবার মেক্সিকোর পাশে যুক্তরাষ্ট্র। একারণে এ দুটি দেশ আম রপ্তানিতে ভৌগোলিক সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। আমদের এক থেকে দেড় কোটি মানুষ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আম রপ্তানিতে এটা আমাদের জন্য এক বিশাল সুযোগ। এই সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।’ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে উন্নত কৃষি চর্চা বা গ্যাপের মডিউল তৈরি করে ফেলেছি। আমরা যে গতিতে এগুচ্ছি তাতে আগামী বছর থেকে আমরা গ্যাপ পুরোপুরি অনুশীলন করতে পারবো। বাংলাদেশের আম রঙ ও স্বাদের দিক থেকে বিশ্বের সেরা আম। এই আম আর কোথাও পাওয়া যায় না। কিন্তু গ্যাপ না থাকার কারণে আমরা এর সুফলকে কাজে লাগাতে পারছি না। বাংলাদেশের কৃষি এখন অনেকদূর এগিয়েছে।’ কর্মশালায় আম উৎপাদনকারী উপকারভোগী, ডিএইয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আইএমইডি ও অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাসহ প্রায় ১৫০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।
কর্মশালায় ‘রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন’ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পটি দেশের আম উৎপাদনকারী ১৫টি জেলার ৪৬টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। আম রপ্তানি ত্বরান্বিতকরণের লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে আমের পেস্টরিস্ক এ্যানালাইসিস (পিআরএ) ও উত্তম কৃষি চর্চা তৈরি, জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রদর্শনী এবং কৃষি প্রযুক্তির তথ্য আদান-প্রদান ও সংরক্ষণ এবং আমের পাচঁটি জাতের প্রোডাক্ট প্রোফাইল তৈরী করা হবে। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আম উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতি (ম্যাংগো প্লাকার, হাইড্রোলিক ম্যাংগো হারভেস্টার, গার্ডেন টিলার, হ্যান্ড স্প্রেয়ার, ফুট পাম্প, এলএলপি ও ফিতা পাইপ সেট) সরবরাহ করা হবে।