রডের দাম ফের বাড়ছে। এক টন ভালো মানের রডের দাম ছাড়িয়েছে ৯৪ হাজার টাকা। তবে বেশি বেড়েছে সাধারণ মানের রডের দাম। এই মানের ৭৮ থেকে ৭৯ হাজার টাকার রড বিক্রি হচ্ছে ৮৩ থেকে ৮৪ হাজারে। একই সঙ্গে বেড়েছে লোহার অ্যাঙ্গেল, গ্রিল, রেলিংয়ের দামও। রাজধানীর পুরান ঢাকার খুচরা বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা যায়।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের তথ্য বলেছে, দুই বছরের ব্যবধানে রডের (প্রতি টন) দাম বেড়েছে ৩০ হাজার টাকা। ২০২০ সালে এক টন রোড ছিল ৬৪ হাজার টাকা, ২০২১ সালে ৬ হাজার টাকা বেড়ে ৭০ হাজার টাকা হয়েছিল। ২০২২ সালে কয়েক ধাপে ২৪ হাজার টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৯৪ হাজার টাকায় ঠেকে। পরে কিছুটা কমে ভালো মানের রডের দাম ৯২ হাজার টাকায় আসে। দাম বেড়ে যায় সিমেন্ট, বালু, পাথর, ইট, থাই অ্যালুমিনিয়াম, গ্রিল ও রেলিং, জেনারেল ইলেকট্রিফিকেশন, স্যানিটেশন, টাইলস ও লেবার খরচ। এতে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের দাম প্রতি স্কয়ার ফুটে ৫৪১ টাকা ৩৮ পয়সা বেড়েছে। দুই হাজার ফুট কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে এর মধ্যে শুধু রডের দাম বাড়ার কারণে ফ্ল্যাটের প্রতি স্কয়ার ফুটে নির্মাণ খরচ বেড়েছে ১২০ টাকা। একইভাবে সিমেন্টের কারণে ৪৪ টাকা, বালুর কারণে ২৩ টাকা, ইটের কারণে ৪০ টাকা, পাথরের কারণে ৬৭ টাকা ৫০ পয়সা, থাই অ্যালুমিনিয়ামের কারণে ৩৫ টাকা ও শ্রমিক খরচের কারণে বেড়েছে ৭০ টাকা পর্যন্ত।
পুরান ঢাকার বংশালের সোনার বাংলা আয়রন, ঢাকা আয়রন, ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ, মনির স্টিল, মেরাজ স্টিল ও সিরাজ অ্যান্ড সন্সসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, এক টন বিএসআরএম রড বিক্রি হচ্ছে ৯৪ থেকে সাড়ে ৯৪ হাজার টাকায়, দুই-তিন সপ্তাহ আগে সেটা ৯২ থেকে ৯৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়ে কেএসআরএমের রড বিক্রি হচ্ছে ৯৩ হাজার থেকে ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা, একেএস ৯২ থেকে ৯৩ হাজার, আরআরএম ৮৬ হাজার থেকে ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা, বন্দর স্টিল ৮৭ হাজার থেকে ৮৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সাধারণ রডের। বিভিন্ন সাধারণ মানের রড দু-তিন সপ্তাহ আগে যেটা টনপ্রতি ৭৮ থেকে ৭৯ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেটা ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেড়ে ৮৩ থেকে ৮৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে দাম বেড়েছে টিউববার, রাউন্ড পাইপ, চেকার প্লেট ও ফলোবক্সের দাম। মাসখানেক আগে ফলোবক্স ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা টনে বিক্রি হলেও এখন ৪ হাজার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকায়। রাউন্ড পাইপের টনপ্রতি দাম ৫ হাজার টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে টিউববার। চেকার প্লেট দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায়। দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেড়ে এমএস প্লেট বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ২২ হাজার ৫শ টাকায়।
রিহ্যাবের তথ্য আরও বলছে, গ্রিল ও রেলিংয়ের দামও বেড়েছে ৫৫ টাকা পর্যন্ত। ২০২০ সালে গ্রিল ও রেলিং প্রতি স্কয়ার ফুটের দাম ছিল ১০৫ টাকা। ২০২১ সালে ছিল ১২০ আর ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬০ টাকা। গ্রিল ও রেলিংয়ের দাম বাড়ার কারণে দুই হাজার ফুট কনস্ট্রাকশনে খরচ বেড়েছে সাড়ে ৭ টাকা। রিহ্যাব সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, চলতি বছর আবাসন সংকট আরও বাড়বে। নতুন ড্যাপের কারণে আবাসনের স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবার জন্য মানসম্মত আবাসন কঠিন হয়ে পড়ছে। বর্তমানে নির্মাণসামগ্রীর দাম আকাশচুম্বি। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতে নির্মাণ উপকরণের দাম কমাতে হবে, ড্যাপ নিয়েও ভাবতে হবে। এটা না হলে উচ্চহারে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম এবং আকাশচুম্বি হবে বাড়িভাড়া। আবাসন খাতে শঙ্কা তৈরি হবে।
