ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বৈশ্বিক মন্দায় চাপা পড়েছে বিটকয়েন

বৈশ্বিক মন্দায় চাপা পড়েছে বিটকয়েন

বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে চাপা পড়েছে বিটকয়েন। এটি ডিজিটাল মুদ্রা। মুদ্রাটির বাজারে বেশ অস্থিরতা চলছে। তবে এক বছর আগেও দ্রুত মুনাফা অর্জনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল কয়েনটি। গত তিন মাসে বিটকয়েনের দাম কমেছে ২ হাজার ৭৪১ ডলার বা ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে অল্পতেই লাভের আশা করেন বিনিয়োগকারীরা। এসব মুদ্রার লেনদেন পরিচালনার জন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই। এজন্য ক্রিপ্টো মার্কেটে বেশি ঝুঁকি আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত বছরের নভেম্বরে প্রতিটি বিটকয়েনের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার ৪০০ ডলার উঠেছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিটকয়েনের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এর প্রভাব পুরো ক্রিপ্টো মার্কেটে পড়েছে। বিটকয়েনের দরপতন হলে একই সঙ্গে আরও বেশকিছু ডিজিটাল ম্দ্রুার দর কমে। আবার প্রধান এই মুদ্রাটির দাম বাড়লে অন্যান্য কয়েনের দর বৃদ্ধি পায়। তাই বলা যায়, ক্রিপ্টো মার্কেটের উত্থান ও পতনে বিটকয়েন বড় ভূমিকা রাখে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রকাশিত গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে বিটকয়েনের তথ্য উঠে আসে। আইএমএফ বলেছে, ডিজিটাল মুদ্রার দাম কমে যাওয়ায় আর্থিক খাতে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। কারণ, বিশ্বের অনেক দেশ আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিটকয়েন ব্যবহার করছে।

মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাপ বাইন্যান্স সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাসে বিটকয়েনের দরপতন হয়েছে ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ২ হাজার ৭৪১ ডলার। এছাড়া গত একদিনে মুদ্রাটির দাম কমেছে ১৩ ডলার। গতকাল রোববার ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিটি বিটকয়েনের লেনদেন হয় ১৬ হাজার ৫৬২ মার্কিন ডলারে।

এদিকে ডিজিটাল মুদ্রার জনপ্রিয়তায় দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে ইথেরিয়াম। গত তিন মাসে এই মুদ্রাটির দরপতন হয়েছে ২১৫ ডলার বা ১৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) একদিনে কমেছে ২ ডলার। গত ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিটি ইথেরিয়াম লেনদেন হয় ১ হাজার ২১৬ ডলারে। এছাড়া তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিএনবি। গত তিন মাসে অন্যান্য মুদ্রার ব্যাপক পতন হলেও বিএনবির দরে কিছুটা উত্থান হয়েছে। এ সময় মুদ্রাটির ৪১ ডলার বা ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ উত্থান হয়েছে। ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিটি বিএনবি ৩১৪ ডলারে লেনদেন হয়। বাংলাদেশে জনপ্রিয় এসব ডিজিটাল ম্দ্রুার লেনদেন নিষিদ্ধ রয়েছে। আইএমএফের প্রতিবেদন ডিজিটাল মুদ্রার বিষয়ে সতর্ক করার পরেই বাংলাদেশ ব্যাংক বিটকয়েন বা যে কোনো ডিজিটাল মুদ্রায় সব ধরনের লেনদেন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭ অনুযায়ী ভার্চুয়াল কোনো মুদ্রার স্বীকৃতি নেই। তাই যে কোনো ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন বা আইনগত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহারের অনুমোদন নেই। এছাড়া ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ভার্চুয়াল সম্পদের বিপরীতে কোনো আর্থিক দাবির সুযোগ নেই। কোনো আইন এ ধরনের সম্পদের গ্যারান্টি দেয় না বলে লেনদেন থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা দেয় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তে কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে ক্রিপ্টো কারেন্সি বা বিটকয়েনে লেনদেনের তথ্য উঠে এসেছে। বিভিন্ন দেশের ভার্চুয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার তাদের ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশে কর্মরত কোনো কোনো তফসিলি ব্যাংকের গ্রাহকের হিসাব ব্যবহার করে ডিজিটাল মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করে ক্রয়-বিক্রয় বা সম্পদ স্থানান্তর করেছেন। এসব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক করেছে।

এর আগে ২০০৯ সালে ১ ডলারে লেনদেনের মাধ্যমে বিটকয়েনের যাত্রা শুরু হয়। ওই বছর থেকেই ডিজিটাল মুদ্রাটির দাম ব্যাপকহারে বাড়তে থাকে। এরপর ২০১৩ সালের জুলাইয়ে এর দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ ডলারে। ২০২১ সালের মার্চে আড়াই গুণ বেড়ে হয় ৪৮ হাজার ৯০৯ ডলার। গত বছরের নভেম্বরে বিটকয়েনের দাম সর্বোচ্চ বেড়ে ৬৪ হাজার ৪০০ ডলারে উঠে। এরপর বিশ্বে করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ব্যাপকহারে দরপতন হতে থাকে এই মুদ্রাটির।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত