রিজার্ভ নামতে পারে ২৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

দেশে রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েই চলছে। দেশে আমদানি দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করা হয়। ফলে রিজার্ভের ওপর চাপ আর দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তাই রিজার্ভ ধরে রাখতে আইএমএফ থেকে ঋণ নেয় বাংলাদেশ। ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়ার পর রিজার্ভ বেড়ে ৩২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার দাঁড়ায়। তবে এর মধ্যে প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা আছে, যা আইএমএফ রিজার্ভের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না করার পরামর্শ দিয়েছে। বিনিয়োগ করা ডলার বাদ দিলে নিট রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে। তবে আইএমএফের মতে, আগামী মাসে বাংলাদেশের প্রকৃত রিজার্ভ আরও কমে ২৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাবে। ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়ের পর গত ২ ফেব্রুয়ারি (রাতে) বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল্যায়ন ও শর্ত বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইএমএফ। সেখানে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ কখন কত হবে, তার প্রক্ষেপণ দিয়েছে সংস্থাটি।

আইএমএফের মতে, আগামী মার্চে বাংলাদেশের প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়াবে ২২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে। তবে জুনে তা বেড়ে হবে ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। আর সেপ্টেম্বরে ২৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে রিজার্ভ। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণও কমবে। অর্থবছর শেষে গ্রস রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। তবে পরের অর্থবছরের থেকে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ বাড়তে থাকবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রিজার্ভ বেড়ে ৩৪.২ বিলিয়ন ডলারে উঠবে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছের ৪৬.৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। আইএমএফ মনে করে, বাংলাদেশ তাদের ঋণ না নিলে রিজার্ভের অবস্থা আরও খারাপ হতো। এ ঋণের ফলে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের রিজার্ভ উন্নতি হবে। তবে আইএমফের ঋণ না নিলে বিদ্যমান নিট রিজার্ভ দিয়ে আড়াই মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ব্যবহারযোগ্য প্রকৃত (নিট) রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে, যাতে ২০২৬ সালের মধ্যে নিট রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের আমদানি দায় মেটানো যায়। এজন্য চাহিদা কমানোর পাশাপাশি মুদ্রার ভাসমান বিনিময় হার চালু করা হবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে বলে প্রত্যাশা বাংলাদেশের।

আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে, তা জুনের মধ্যে বাজারের সমান হতে হবে। এখন ১০২ টাকা দামে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম প্রায় ১০৬ টাকা। বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হলে ডলারের দর একটিই (সিঙ্গেল রেট) করা হবে। খাদ্য, জ্বালানি আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ডলারের দাম বাড়লে এসব পণ্যের দামেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। গত ৩০ জানুয়ারি এ-সংক্রান্ত ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ বোর্ড। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার এরই মধ্যে পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি ঋণ পেতে বাংলাদেশের সময় লাগবে আরও প্রায় ৩৯ মাস। এজন্য ৩৭টি শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এর সঙ্গে সংস্কারের শর্ত রয়েছে আরও ১১টি। সব মিলিয়ে শর্তের সংখ্যা ৪৮টি। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল্যায়ন করতে গিয়ে আইএমএফ বেশকিছু দুর্বল দিক তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, বৈদেশিক মুদ্রা তথা রিজার্ভ সংকট, সরকারের সাম্প্রতিক কৃচ্ছ্র সাধন নীতি। অর্থনীতির মূল্যায়ন করতে গিয়ে আইএমএফ মন্তব্য করে, সরকারের সাম্প্রতিক কৃচ্ছ্র সাধন নীতি স্বল্পমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস করবে এবং মধ্য মেয়াদে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এদিকে চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে পাঁচ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও গত অর্থবছর তা ছিল সাত দশমিক ২ শতাংশ। তবে আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধি বেড়ে সাত দশমিক ১ শতাংশে উঠবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সরকারের ব্যয় ও বিনিয়োগের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিকে দায়ী করা হবে। সংস্থাটির মতে, চলতি অর্থবছর সরকারের ব্যয়ে সাড়ে সাত শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে। তবে ব্যক্তি খাতে সাত দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। চলতি সার্বিকভাবে বিনিয়োগে ছয় দশমিক ২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে বলে প্রাক্কলন করেছে আইএমএফ। এছাড়া আমদানিতে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানিতে সাত দশমিক ২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ।

গত ৩০ জানুয়ারি ঋণ অনুমোদনের পর বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফ জানায়, এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) বা বর্ধিত ঋণ সুবিধা ও এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএএফএফ) বা বর্ধিত তহবিল সুবিধার আওতায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৩৩০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। আর আইএমএফের নতুন গঠিত তহবিল রিজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় আরও ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। ঋণ ছাড়ের টাইমফ্রেম বিশ্লেষণে দেখা যায়, আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি বাংলাদেশ পাবে চলতি বছর ১ নভেম্বর। তৃতীয় কিস্তি মিলবে আগামী বছর ১ মে ও চতুর্থ কিস্তি ১ নভেম্বর। ঋণের পঞ্চম কিস্তি আইএমএফ ছাড় করবে ২০২৫ সালের ১ মে ও ষষ্ঠ কিস্তি ৩১ ডিসেম্বর। আর সপ্তম কিস্তি ছাড় হবে ২০২৬ সালের ১ মে।