ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উদ্যমী খালেদা

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে উদ্যোক্তা

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে উদ্যোক্তা

আজ থেকে এক যুগ আগের কথা। যাত্রীবাহী বাসে করে ঢাকা থেকে নরসিংদী ফিরছিলেন খালেদা বেগম। পথে হঠাৎই বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাস পাশ থেকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় বাসটি উল্টে যায় এবং জানালার পাশে বসা খালেদা বেগমের হাতে ও শরীরে প্রচণ্ডভাবে বিঁধে যায় জানালার ভাঙা কাঁচ। মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শরীরের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে সেখানে কেটে যায় বেশ কিছুদিন। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেলেও চিরতরে নিষ্ক্রিয় হয়ে তার ডান হাত। জীবনে বাঁক নেয়ার একটি ছোট্ট ঘটনা। কিন্তু রেশটা অনেক গভীর। কারণ খালেদা বেগম যে শুধুই খালেদা বেগম তাই নয়, বরং সংসারের উপার্জনের একজন শক্ত হাতিয়ার। কিন্তু ঘটনা এখানে থেমে থাকে না। অন্যের বাড়িতে কাজ করে উপার্জনকারী খালেদা বেগমের অক্ষম হওয়ার পর তার দিনমজুর স্বামী মফিজউদ্দিনও তাকে রেখে অন্যত্র চলে যায়। ছোটো ছোটো ২ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে অভাব আরও ঘনীভূত হয়। কিন্তু আহার তো জোগাতেই হবে। নিরন্নতা থেকে সন্তানদের একটুখানি হলেও মুক্তি দিতে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নেয় খালেদা। এভাবেই চলতে থাকে দিনগুলো। সন্তানেরা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। অবশ্য পাশেই বাস করা নিজের ভাইয়ের কিছু সহযোগিতাও ছিল খালেদার পরিবারের পরিবারের প্রতি।

বলছিলেন নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার শুকুন্দী ইউনিয়নের উত্তর নারান্দি গ্রামের এক অসহায় নারীর কথা, যার জীবন-যুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে একের পর এক পরাজয় নেমে আসে। শারীরিক ও মানসিকভাবে হেরে যেতে থাকে। কিন্তু হার শেষ পর্যন্ত মানেনি। স্বামী খোঁজ-খবর না রাখলেও নিজের উদ্যেমতা একেবারে মন থেকে যায়নি। ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছে বার বার খালেদা। এক পর্যায়ে এসে সফলও হন খালেদা। এদিকে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সহায়তায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (ডিএফইডি) ২০১৪ সালে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার শুকুন্দি ইউনিয়নে সমৃদ্ধি কর্মসূচি শুরু করে। একই বছর খালেদা বেগম সমৃদ্ধি কর্মসূচির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও শুকুন্দি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খালেদা বেগমকে উদ্যমী সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার জন্য সংস্থার কাছে সুপারিশ করেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খালেদা বেগমকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ১ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়। তার মধ্যে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ১টি ইজিবাইক কিনে ও ২০ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির সামনে মুদির দোকান শুরু করে। খালেদার বড় ছেলে ইজিবাইক চালান শুরু করে আর খালেদা ও তার বৃদ্ধ মা দোকান পরিচালনা শুরু করে। এতেই জীবনে মোড় ঘুরতে শুরু করে। অনুদান পাওয়ার পর থেকেই খালেদা বেগম ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে দোকান পরিচালনায় মনোযোগী হন। দোকান ও ইজিবাইক থেকে তার মাসিক আয় প্রায় ১৫০০০-১৮০০০ টাকা। ছোটো ছেলে ও মেয়ের লেখাপড়া খরচ জুগিয়েও সংসার চলছে। স্বচ্ছলতার হাসি ফুটে উঠেছে। ডিএফইডি’র মনোহরদী শাখা ব্যবস্থাপক মো. শরিফুল ইসলাম জানান, ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কর্মসংস্থানের পথ হওয়ায় এলাকায় তার সম্মান ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, খালেদা বেগমের বর্তমানে সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ টাকা। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ব্যবসা আরও বড় করা। আর ছোটো ছেলে ও মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত