ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গার্মেন্ট পণ্য চুরি বন্ধে ব্যবস্থা চায় বিজিএমইএ

গার্মেন্ট পণ্য চুরি বন্ধে ব্যবস্থা চায় বিজিএমইএ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গার্মেন্ট পণ্য চুরি বন্ধে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আইনের কঠোর প্রয়োগসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে পোশাক খাতের আইনশৃঙ্খলা জনিত বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২ হাজারের বেশি কাভার্ডভ্যান থেকে শত শত কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক পণ্য চুরি করেছে একটি চক্র। ২০২২ সালে প্রায় ২০ থেকে ২২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে আমি সাম্প্রতিক একটি ঘটনা তুলে ধরছি। গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ব্রাজিল থেকে ভিডিওর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারককে জানানো হয়— প্রায় বেশিরভাগ কার্টনের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পোশাক তারা বুঝে পাননি। এই শিপমেন্টে ২৬ হাজারের বেশি পোশাক ছিল। সেবার প্রায় ৮ হাজারের মতো পোশাক চুরি হয়।

তিনি বলেন, এ ঘটনা জানানো হলে এই চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার ও চুরি করা পণ্য জব্দ করা হয়। চক্রের প্রধান হোতা গডফাদার শাহেদের বিরুদ্ধে ১৭ থেকে ১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও আছে। ধরা পড়ার পর শাহেদ জানিয়েছেন, ক্রেতাদের স্যাম্পল দেখে তারা সেই স্যাম্পলের বাজার দর যাচাই করেন। যদি পণ্যের মূল্যমান ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে হয়, তবেই তারা এ ধরনের চুরির অভিযান চালায়।

তিনি আরও বলেন, শুধু শাহেদ নয়, গার্মেন্ট পণ্য চুরির জগতে আরও মাস্টারমাইন্ড ও চক্র রয়েছে, যারা একই কাজ করছে। পরবর্তীতে ধরা পড়লেও প্রায় কোনো শাস্তি ভোগ না করে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসছে। এই অপরাধীদের কারণে আমাদের পোশাক শিল্প বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ফারুক হাসান বলেন, মহাসড়কে পোশাক শিল্পের পণ্য চুরি রপ্তানিকারকদের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। বিজিএমইএ পোশাক শিল্পের চুরি রোধে বছরের পর বছর ধরে মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে র‍্যাব ও ডিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা সংস্থা একাধিক চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু চুরির মামলা হওয়ায় আইনের দুর্বলতার কারণে চোর চক্র ১৫ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যে জামিনে বের হয়ে আসে। এরপর পুনরায় একই কাজ করতে থাকে। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের অসৎ কর্মচারী এসব অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। যারা চক্রগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ করে পোশাক শিল্পের রপ্তানি পণ্য লোপাট করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। এছাড়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। এ ব্যাপারে যেন কাউকে কোনো ছাড় দেয়া না হয়।

এদিকে মহাসড়কে পোশাক চুরি রোধে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে বিজিএমইএ। সেগুলো হলো-

১. ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের চলমান কাজ আগামী মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। মহাসড়কে গার্মেন্ট পণ্য চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কতিপয় নাম সর্বস্ব কোম্পানি এসব চুরির মালামাল কিনে স্টকলট হিসেবে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। স্টকলট রপ্তানির ক্ষেত্রে মালের উৎস নিশ্চিত করতে হবে।

৩. প্রয়োজনে বিজিএমইএ/বিকেএমইএ থেকে সনদপত্র গ্রহণের মাধ্যমে রপ্তানির অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। ৪. চোর চক্রকে ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দাদেরও কাজে লাগাতে হবে। ৫. কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি, কাভার্ডভ্যান চালক ও হেলপারদের ডাটাবেইজ প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্টদের কাছে সেই তথ্য হস্তান্তর করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত