ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রোজার আগেই খেজুরের বাজারে আগুন

মানভেদে কেজিতে বেড়েছে ৩৫০-১২০০ টাকা
রোজার আগেই খেজুরের বাজারে আগুন

পবিত্র রমজান সামনে রেখে পাইকারি বাজারে বাড়তে শুরু করেছে খেজুরের দাম। কয়েক দিনের ব্যবধানে পাইকারি দামে কার্টনপ্রতি (৫ কেজি) দাম বেড়েছে মানভেদে হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী ও কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা যায়, মধ্যমানের প্রতি কেজি মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়, যেটি গত বছর রোজায় দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। মধ্যমানের প্রতি কেজি মাবরুম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা, যেটি গত রোজায় বিক্রি হয়েছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। আর প্রতি কেজি ম্যাকজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায়, যেটি গত রোজায় বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকা কেজিতে। প্রকারভেদে প্রায় সব রকম খেজুরের দাম বেড়েছে।

আমদানিকারকরা বলেছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানিকারক দেশেই বেড়েছে খেজুরের দাম, যার প্রভাবে বাজারে খেজুরের দাম বাড়ছে। রাজধানীর বনশ্রীতে ফল বিক্রেতা আবু ইয়াসমিন বলেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর প্রতি কেজি খেজুরের দাম ৩০০ টাকার মতো করে বেড়েছে। রোজার মধ্যে আরও বাড়ার সম্ভবনা আছে।

এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের খেজুর বিক্রেতা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘কিছু কিছু খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর যেসব খেজুর প্রতি কার্টন ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেগুলো দাম বেড়ে হয়েছে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা।’ তথ্য মতে, আমদানিতে প্রতি কেজির সর্বোচ্চ শুল্কায়ন মূল্য পড়ছে ১০৮ থেকে ১১০ টাকা। সর্বনিম্ন শুল্কায়ন মূল্য পড়ছে প্রতি কেজি ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা। শুল্ককর পরিশোধ করার পর এই খেজুরগুলোই বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১ হাজার, সর্বনিম্ন ২৫০ টাকায়। গত মাসের শেষ সপ্তাহে ৩০০ টন খেজুর আমদানি করেছে চট্টগ্রামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটস’। গত ২৬ জানুয়ারি দাখিল করা এসব খেজুরের বিল অব এন্ট্রি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আমদানি করা প্রতি কেজি খেজুরের শুল্কায়ন মূল্য পড়েছে ৫৩ দশমিক ৮২ টাকা। আমদানিকারকরা দাম বৃদ্ধির পেছনে সরবরাহ সংকটকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করালেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত এক বছরে দেশে চাহিদার কাছাকাছি খেজুর আমদানি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা বছর দেশে এক লাখ টন খেজুরের চাহিদা থাকে। গত এক বছরে এক লাখ টনের বেশি খেজুর আমদানি হয়েছে। শুধু মাত্র চট্টগ্রাম দিয়েই খেজুর আমদানি হয়েছে ৯০ হাজার টনের বেশি। এর বাইরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েও এয়ার কার্গোতে অনেক খেজুর আমদানি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯০ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে গত সাত মাসে (জুন থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত) ৩০ হাজার ৯১১ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পরও দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ফল আমদানিকারক এরাবিয়ান ডেটস সুপার শপের মালিক মো. শহিদুল আলম বলেন, ‘ডলারের কারণেই প্রতি কার্টনে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেশি খরচ পড়ছে। এর বাইরে এখন সৌদি আরবেই খেজুরের দাম একটু বাড়তি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রপ্তানিকারক দেশগুলোতে জিনিসপত্রে দাম বেড়েছে। আমাদের দেশে এখন খেজুরের যেই দাম, সৌদিতে এর চেয়ে বেশি। সেই হিসেবে আমি বলব দেশে খেজুরের দাম বাড়েনি। আমদানিতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব দামে পড়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত