এসএমই ফাউন্ডেশন কার্যাদেশের বিপরীতে জামানতবিহীন ঋণ নিতে পারবেন এসএমই উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে করপোরেট প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সচেতন করতে কাজ করবে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং থিংকবিগ সলিউশনস (ট্রেডেক্স)। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের সম্মেলনকক্ষে এসএমই ফাউন্ডেশন ও ট্রেডেক্স আয়োজিত ম্যাচমেকিং ও মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সএমই উদ্যোক্তাদের ফ্যাক্টরিং ফাইন্যান্সের আওতায় অর্থায়ন এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসর্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএপিএ) প্রশাসক জিন্নাত রেহানা, ট্রেডেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এম মাসরুর রিয়াজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান সাত্তার। এছাড়াও এসএমই ফাউন্ডেশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহ উদ্দিন মাহমদু এবং মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বক্তব্য রাখেন।
সভায় জানানো হয়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উদ্যোগ (এমএসএমই) একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় এসএমই খাতের বিভিন্ন ধরনের ঋণসহায়তা (প্রচলিত ব্যাংক ঋণ) কার্যক্রম চলমান। তবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাংকঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। ঋণ প্রাপ্তির পর পণ্য তৈরি করে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানকে সরবরাহের মাধ্যমে প্রাপ্ত ‘ট্রেড রিসিভেবল’ সমূহের বিপরীতে তাৎক্ষণিক অর্থপ্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি সহজ ও স্বয়ংক্রিয় নয়। তাছাড়া ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নিয়েও উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি এবং জামানতবিহীন ঋণসুবিধা হিসেবে ‘ফ্যাক্টরিং ফাইন্যান্স’ শিল্প খাতে বিশেষত এসএমই খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তার বকেয়া বিল ডিসকাউন্ট-কমিশনে দেনাদার ব্যতীত তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে বিক্রি করাকে ফ্যাক্টরিং বলে। মূলত কোনো পণ্য উৎপাদনকারী বা সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কোনো অর্ডারের বিপরীতে পণ্য বা সেবা প্রস্তুতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চলতি মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্ডারটি তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের নিকট কমিশনে বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহ করার পদ্ধতিই হলো ফ্যাক্টরিং। চলতি মূলধন সংকট লাঘবের লক্ষ্যে অর্ডার দাতা এবং পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ব্যতীত তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের জন্য ফ্যাক্টরিং উন্নত দেশে একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি।
ফ্যাক্টরিং ফাইন্যান্স একটি জামানতবিহীন অর্থায়ন প্রক্রিয়া, যা বিলম্বিত পরিশোধের শর্ত এবং চেকের মাধ্যমে পরিশোধ ব্যবস্থা থাকলে যে কোনো পণ্য বা সেবা উৎপাদনকারী গ্রহণ করতে পারে। বৈধ কাগজপত্র যেমন ট্রেড লাইসেন্স, এনআইডি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিক্রয় ডাটাসহ দেনাদারের তথ্য দিয়েই যে কোনো প্রতিষ্ঠান সহজে এ সেবা নিতে পারে। ফ্যাক্টরিংয়ের সঙ্গে এলসির মূল পার্থক্য হলো এলসি একটি পেমেন্ট পদ্ধতি। আর ফ্যাক্টরিংয়ের মাধ্যমে তৃতীয়পক্ষ হতে মূলধন জোগান করা হয়।
স্বল্পমেয়াদি এবং জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা হিসেবে ‘ফ্যাক্টরিং ফাইন্যান্স’ শিল্প খাতে বিশেষত এসএমই খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয় এলসির মাধ্যমে। কিন্তু এলসি পদ্ধতিতে বাণিজ্য করা সময়সাপেক্ষ ও জটিলতানির্ভর। তাছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) ব্যবসায়ীদের জন্য এলসি পাওয়া আরো কঠিন। এক্ষেত্রে ফ্যাক্টরিং ফাইন্যান্স একটি বিশেষ বিকল্প হতে পারে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের এক প্রতিবেদনে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় রপ্তানি খাতে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে ফ্যাক্টরিং প্রক্রিয়াকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ট্রেডেক্সের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে ফ্যাক্টরিং ফাইন্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাইলট আকারে ট্রেডেক্সকে গত ১৮ জানুয়ারি লোকাল ফ্যাক্টরিং প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়। ফ্যাক্টরিং ফাইন্যান্স কার্যক্রমের প্রচার ও প্রসারে যৌথ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ট্রেডেক্সের সমঝোতা স্মারক সই হয়। যৌথ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে করপোরেট, ফাইন্যান্সার ও সাপ্লায়ার ম্যাচমেকিং এবং ফাইন্যান্সিং কর্মসূচিতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, এসএমই চেম্বার/অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, এসএমই উদ্যোক্তা এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।