বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) অনুযায়ী প্রতিটি কোম্পানিকে লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে দিতে হয়। তবে বিমা কোম্পানিগুলো লভ্যাংশের এই অংশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে দিতে চাচ্ছে না। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে বিমা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে জমা দেওয়ার বিষয়ে অব্যাহতির দাবি জানানো হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর বিআইএ’র চেয়ারম্যানের লেখা এই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) ধারা ২৩৪ এর উপধারা ১ অনুযায়ী সব কোম্পানিকে একটি শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও একটি শ্রমিক কল্যাণ তহবিল স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে।
‘আইনে প্রত্যেক বছর শেষ হওয়ার অন্যূন নয় মাসের মধ্যে পূর্ববর্তী বছরের নিট মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থ ৮০:১০:১০ অনুপাতে যথাক্রমে অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন ২০০৬ এর ধারা-১৪ এর অধীনে স্থাপিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক দ্য ইন্সটিটিউট অব চার্টাড অ্যাকাউন্টসের প্রেসিডেন্টকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে কোনো কোম্পানি/প্রতিষ্ঠান অডিট করার সময় তাদের তালিকাভুক্ত অডিট ফার্ম নিট মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে জমার বিষয়টি নিরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসেন। অডিট ফার্মগুলো উল্লেখিত পত্রের নির্দেশনা অনুসরণ করে বিমা কোম্পানিগুলোতে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি বিমা কোম্পানিগুলোকে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করে আসছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিআইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অডিট কোম্পানিগুলো বিভিন্ন বেসরকারি বিমা কোম্পানির হিসাব নিরীক্ষণের সময় কোম্পানির বিগত বছরের নিট মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে জমার বিষয়ে আপত্তি দিচ্ছে, যা কোম্পানির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলো অডিট কার্যক্রম সমাধানে নানা আপত্তির সম্মুখীন হচ্ছে। সরকারি ২টি বিমা করপোরেশনে যতদূর জানা যায়- এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই।
এতে আরও বলা হয়েছে, একই ধরনের সমস্যা ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রেও রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ২০১৬ সালের ৯ মার্চ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেয়। ২৮ নভেম্বর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় একমত পোষণ করে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধারা-২৩৪ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োগ না করার নিমিত্ত শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অডিটের বিষয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানা যায়। এসব তথ্য তুলে ধরে চিঠিতে শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ২৩৪ এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য ধারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রেও যেন প্রয়োগ না করা হয়- সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।