উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে এখন থেকেই প্রস্তুতির আহ্বান বাণিজ্য সচিবের

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ায় ২০২৬ সালের পর রপ্তানি ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ওই সময়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে ব্যবসায়ীদের এখন থেকে প্রস্তুতি নেয়া দরকার বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের এখন থেকে প্রস্তুতি নেয়া দরকার, নিজস্ব পায়ে দাঁড়িয়ে ব্যবসা করতে হবে। বিশ্বে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তাকে রপ্তানি করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে এখন সরকার ৪৩টি খাতে ২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশ ইনসেনটিভ দিচ্ছে। এই অর্থবছরে ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্যাস ইনসেনটিভ দেওয়ার জন্য নির্ধারিত আছে। ২০২৬ সালের পর এটা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। তখন ডব্লিউটিও’র (ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন) বিধিবিধান অনুযায়ী যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়, সেটা দেয়া হবে। তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যে জিনিসটা করা দরকার সেটা হলো আমাদের অনেক জায়গায় হয় তো কিছু পরিবর্তন করতে হবে। রিফর্ম করতে হবে, যেখানে অনেক হোমওয়ার্ক করতে হবে। সেটা যদি আমরা করতে পারি, তাহলে স্মুথ ট্রানজেকশন সম্ভব।

তিনি বলেন, আমেরিকা বাদে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আমরা বিনা শুল্কে রপ্তানি করতে পারি। এটা ২০২৬ সালের পরে অনেক দেশেই থাকবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ এবং ইউকে (যুক্তরাজ্য) এখানে থাকবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। তারপরে আবার থাকবে না। এটা একটা বড় জায়গা। আর একটা হচ্ছে ওষুধ রপ্তানিতে ট্রিপ (ট্রেড রিলেটড আসপেক্ট অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস চুক্তির আওতায়)- এর অধীন আমরা ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে যে সুবধিা পায়- পেটেন্ট ফি না দিয়েও অন্যের ফর্মুলা ইউজ করে আমরা ওষুধ তৈরি করতে পারি। এখন পেটেন্ট যদি আমাকে কিনতে হয়, ওষুধের দাম বেশি হবে। দাম বেশি হলে আমাদের দেশের ওষুধের দাম বেশি হবে। আমরা ১৪০টির মতো দেশে ওষুধ রপ্তানি করি, সেখানেও এর একটা প্রভাব পড়বে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের ক্ষতি হবে তা না। এই জায়গাগুলোই একটা ক্ষতি হবে, বলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই সিনিয়র সচিব। তিনি বলেন, এখন আমরা ৩০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করলে শুল্ক সুবিধাটা পায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে তা ২৫ শতাংশ। যখন আমরা এলডিসি থেকে উন্নয়শীল দেশ হয়ে যাব, এটা সাধারণভাবে থাকবে না। এটা ৫০ শতাংশ হয়ে যাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। ইউরোপীয় ইউনিয়নেও ৫০ ভাগ হয়ে যাবে। ‘তার মানে এখন কম ভ্যালু অ্যাডিশন করে বেশিরভাগ শুল্ক সুবিধা পাচ্ছেন। তখন কিন্তু আপনার নিজের ব্যাকওয়ার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং অনেক ইনভেস্টমেন্ট লাগবে, যাতে আপনি অন্তত শতকরা ৫০ শতাংশ সেই সুবিধাটা পান। এমনকি আমাদের গার্মেন্টস খাতে এখন ৫০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন নেই।’ তপন কান্তি ঘোষ আরও বলেন, আমরা শিল্পে অনেক ডাইভারসিফাই করেছি। অভ্যন্তরীণভাবে যদি আমরা দেখি বাংলাদেশে অনেক ধরনের শিল্প খুবই ভালো অবস্থানে গিয়েছে। কিন্তু এটাকে এক্সপোর্ট মার্কেটে আমরা এখনো নিতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণভাবে ৪৩টি পণ্যে ২ থেকে ২০ শতাংশ ক্যাশ সাবসিডি দেয়া হয়। এর বাইরে আরও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা আছে। ৭ বিলিয়ন ডলারের যে এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ড আছে, এখান থেকে এক্সপোর্ট সেক্টরের কাঁচামালের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হতো। এখন হয়তো সেক্টর কমে আসবে। এরকম অনেকগুলো যে সুবিধা আছে, সেই সুবিধা হয়তো আমরা আস্তে আস্তে দিতে পারব না। একটা হচ্ছে ডব্লিউটিও’র যে বিধিবিধান তার জন্য আমরা দিতে পারবো না। আর একটা হচ্ছে সরকারের সামর্থ্যটাও দেখতে হবে। সুতরাং, ব্যবসায়ীদের এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। তার নিজস্ব পায়ে দাঁড়িয়ে ব্যবসা করতে হবে এবং বিশ্বে অন্য দেশের সঙ্গে কমপিট (প্রতিযোগিতা) করে তাকে রপ্তানি করতে হবে। সেখানে তাহলে কি সরকার সাপোর্ট দেবে না, অবশ্যই দেবে। যেটা ডব্লিউটিও’র বিধিবিধান অনুযায়ী দেয়া যায়, সেই পরিমাণ দেবে, যোগ করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। তিনি বলেন, ৪৩টি খাতে এই অর্থবছরে ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা সাবসিডি দেওয়ার জন্য নির্ধারিত আছে, ক্যাশ ইনসেনটিভ। এটা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না ২০২৬ সালের পরে। তখন আমাদের অন্যভাবে দিতে হবে। সেটা হয় তো তার বিদ্যুৎ বিলে যে ট্যাক্স, ভ্যাট নেয় সেটা আমরা বাদ দিতে পারি। অথবা তার গবেষণার জন্য আমরা ফান্ড দিতে পারি। তাকে হয় তো বিনা শুল্কে কাঁচামাল আনার ব্যবস্থা করতে পারি। ক্যাশ ইনসেনটিভ দেয়া যাবে না। সেজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহসিনা ইয়াসমিন। এছাড়া সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক (ফিন্যান্স ও অ্যাডমিন) মোহাম্মদ আলী হোসেন অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।