উপকূলীয় এলাকায় বন্যার ঝুঁকি কমাতে বিশ্বব্যাংকের সহজ শর্তের ঋণের প্রায় ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা আটকে ছিল। নিয়মিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক না হওয়ায় প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব হচ্ছিল। ফলে বন্ধ ছিল ঋণ চুক্তির প্রক্রিয়া।
অথচ ‘রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপশন অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি রিডাকশন প্রজেক্ট (রিভার)’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য প্রায় ৮ মাস আগেই এ ঋণ অনুমোদন দেয় বিশ্বব্যাংক বোর্ড। তবে এরই মধ্যে প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। ফলে বিশ্বব্যাংকের এই ঋণ অবমুক্তের যে বাধা ছিল তা আর থাকছে না।
আগামী রোববার, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে অবমুক্ত হবে বিশ্বব্যাংকের সহজ শর্তের ঋণ। পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৩২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক তাদের সহজ শর্তের তহবিল ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে ঋণ দেবে ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। বাকি ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা খরচ করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।
প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর আওতায় ৫০০টি বহুমুখী বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, অ্যাক্সেস রাস্তা এবং জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে নদী ও আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাভাবিক সময় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এসব অবকাঠামোতে সৌরশক্তি ব্যবস্থা, পানি, স্যানিটেশন এবং নানান স্বাস্থ্য সুবিধা থাকবে। নারী ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্যও থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। প্রকল্পটি বন্যার প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া এবং আচরণগত পরিবর্তনের পদক্ষেপে সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা জোরদারে সহায়তা করবে।
এ প্রকল্পের অন্যান্য কার্যক্রম হলো- ১০০টি সৌরশক্তিচালিত ক্ষুদ্রাকার গ্রিড স্থাপন। এছাড়া ২৫০টি মাঠ উঁচু করা হবে। পাশাপাশি ২৭৫ কিলোমিটার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র সংযোগ সড়ক উন্নয়ন, ৫০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, ১ হাজার ৩৩০ মিটার কালভার্ট নির্মাণ এবং ১১০টি কমিউনিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার সংযোগ সড়ক উন্নয়ন করা হবে। আরো থাকছে ১৫টি নৌঘাট তৈরি, সড়কে সৌরবাতি স্থাপন এবং বজ্র নিরোধক যন্ত্র স্থাপন।
বিশ্বব্যাংকের মতে, প্রতি বছর বন্যা এবং নদীভাঙন প্রায় ১০ লাখ মানুষকে প্রভাবিত করে। এ অবস্থায় নতুন এ প্রকল্প তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, সুরমা ও মেঘনা নদীর অববাহিকার অত্যন্ত বন্যাপ্রবণ জেলাগুলোর জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সাহায্য করবে। জেলাগুলো হলো- নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ। এসব জেলার ৭৮টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে এ প্রকল্প। এ প্রকল্পসহ একনেকে অনুমোদনের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের আটটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা, যার বেশিরভাগ বৈদেশিক অর্থায়ন।