গত সপ্তাহজুড়ে স্বর্ণের দামে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা গেছে। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান-পতন হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারেও টানা তিনদিন স্বর্ণের দাম বাড়ানো বা কমানো হয়েছে। এর আগে দেশের বাজারে কখনো টানা তিনদিন স্বর্ণের দাম সমন্বয়ের ঘটনা ঘটেনি। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৯৮৮ দশমিক শূন্য ৮ ডলার। সেখান থেকে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ২০ মার্চ লেনদেন শুরুর অল্প সময়ের মধ্যে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় ১ হাজার ৯৬৮ দশমিক ৫ ডলারে নেমে আসে। অর্থাৎ প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২০ ডলার কমে যায়।
অবশ্য দরপতনের পর সেদিনই স্বর্ণের দামে বড় উত্থান হয়। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়ে ২০ মার্চ লেনদেনের এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৭ দশমিক ৭৮ ডলারে উঠে যায়। তবে ওইদিন লেনদেনের শেষদিকে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমে যায়। এরপরও প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৭৭ ডলারের ওপরে থাকে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতে দাম বেড়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম হয় ১ হাজার ৯৮৪ ডলার। এরপর দফায় দফায় দাম কমে প্রতি আউন্স ১ হাজার ৯৩৭ ডলারে নেমে যায়। অর্থাৎ একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৪৭ ডলার কমে যায়। স্বর্ণের দামে এমন অস্থিরতা দেখা যায় পরের কার্যদিবস ২২ মার্চেও। ২২ মার্চ লেনদেনের শুরুর দিকে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৯৩৬ ডলার। লেনদেনের শেষদিকে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ওঠে ১ হাজার ৯৪৫ ডলারে।
পরের কার্যদিবস ২৩ মার্চ লেনদেন শুরু হতেই স্বর্ণের দামে বড় উত্থান হয়। এক লাফে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে ১ হাজার ৯৭৩ ডলারে ওঠে। ওইদিন লেনদেনের শেষদিকে স্বর্ণের দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লাগে। ফলে এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৯৯ ডলার হয়ে যায়।
আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ২৪ মার্চ লেনদেন শুরু হতেই প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। অবশ্য দিনের লেনদেনের শেষ দিকে দাম বাড়ার এই ধারা অব্যাহত থাকেনি। বরং শেষ দিকে দফায় দফায় স্বর্ণের দরপতন হয়। এতে দিনের লেনদেন শেষে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৭৮ দশমিক ৫৭ ডলারে থিতু হয়।
এর মাধ্যমে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম কমে ১৪ দশমিক ৯৩ ডলার বা দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর সপ্তাহের ব্যবধানে কমে ৯ দশমিক ৫১ ডলার বা দশমিক ৪৭ শতাংশ। অবশ্য এরপরও মাসের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি রয়েছে। অর্থাৎ এক মাস আগের তুলনায় এখন এক আউন্স স্বর্ণের দাম ১৬১ ডলার বেশি।
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে এমন অস্থিরতা দেখা দেয়ায় দেশের বাজারেও দাম সমন্বয়ে অস্থির হয়ে ওঠে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। এতে ২১, ২২ ও ২৩ মার্চ পরপর তিনদিন ঘোষণা দিয়ে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করে বাজুস। এরমধ্যে দুদিন স্বর্ণের দাম কমানো হয় এবং একদিন বাড়ানো হয়। অবশ্য তার আগে ১৮ মার্চ ঘোষণা দিয়ে স্বর্ণের রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়ানো হয়।
১৮ মার্চ একলাফে সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ৭ হাজার ৬৯৮ টাকা বাড়ানো হয়। এতে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম হয় ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকা। দেশের বাজারে এর আগে কখনো স্বর্ণের এত দাম হয়নি। ১৯ মার্চ থেকে স্বর্ণের এই দাম কার্যকর হয়।
রেকর্ড দাম বাড়ানোর পর ২১ মার্চ সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে ৯৭ হাজার ৬২৮ টাকা করা হয়। পরের দিন ২২ মার্চ তা আরও কমানো হয়। সবচেয়ে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৭ টাকা কমিয়ে ৯৬ হাজার ৪৬১ টাকা করা হয়।
অবশ্য এরপর ২৩ মার্চ আবার স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৭ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এতে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম হয় ৯৭ হাজার ৬২৮ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১০৮ টাকা বাড়িয়ে ৯৩ হাজার ১৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৯১ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৮৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ৭৫৮ টাকা বাড়িয়ে ৬৬ হাজার ৫৪৩ টাকা করা হয়। বর্তমানে এ দামেই দেশের বাজারে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।