ঢাকা ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন ২০২৩’এর খসড়ায় বলা হয়েছে, ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) কাছে কোম্পানি নিবন্ধনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন ২০২৩’ এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দ্রুত ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন ২০২৩’ বাস্তবায়ন করতে বলেছে। একই সঙ্গে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণ (নন পারফর্মিং লোন বা এনপিএল) ১০ শতাংশ কমাতেও বলেছে। সভা শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে খসড়া আইনের প্রবিধানগুলো সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এটাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়।’

এখানে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি কারা তার একটা সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, আর্থিক সামর্থ্য থাকার পরও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধ না করে তাহলে তা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে।

এছাড়া কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নামে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করলে, সেই ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি বলে গণ্য করা হবে। একই সঙ্গে যে উদ্দেশ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ অগ্রিম নেয়া হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য ব্যবহার না করলেও ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণ গ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবে। সচিব জানান, খসড়া আইনে বিধান রয়েছে যে, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরবরাহ করবে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর ৫ বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি হিসেবে পরিগণিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারবে।

নোটিশ প্রদানের দুই মাসের মধ্যে ঋণখেলাপি তার কাছে পাওনা টাকা পরিশোধ ব্যর্থ হলে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা যাবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি ঋণ খেলাপির তালিকা না পাঠায়, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০ লাখ এবং সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে। তারপরও যদি লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে তাহলে প্রতিদিনের জন্য ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা যাবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব। মাহমুদুল হোসাইন বলেন, ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন, ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ঋণ প্রদান ও জামানত গ্রহণ- এ বিষয়টি নতুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা তার আত্মীয় যেই হোক না কেন তাকে অবশ্যই জামানত বা বন্ড বা সিকিউরিটি দিয়ে ঋণ নিতে হবে।

ব্যাংক কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বা ফাউন্ডেশন যেন বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত পরিদর্শন করতে পারে সেই ধারা এখানে সংযোজন করা হয়েছে। এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি পরিচালক হতে পারবে না : এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি পরিচালক হতে পারবে না এমন বিধান রয়েছে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন ২০২৩ এর খসড়ায়। সচিব বলেন, বর্তমানে এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক থাকতে পারেন। এটা পরিবর্তন করে এখন সর্বোচ্চ তিনজন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, বর্তমানে এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক থাকতে পারেন। এটা পরিবর্তন করে এখন সর্বোচ্চ তিনজন করা হয়েছে। মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এটাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবিত আইনে মোট ৩৪টি ধারণা রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত