কৈশোরবান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও শ্রেষ্ঠ সময়
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
বয়স ১০ থেকে ১৯ কৈশোরবান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময়টি শরীরের যেমন খেয়াল রাখতে হয়, তেমনি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যও শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে এ সময়টিকে বর্তমান সরকারও বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই এ সময়টিকে সরকারের স্লোগান হচ্ছে- ‘দশ থেকে উনিশে আমরা তোমার পাশে’। এজন্য বাংলাশে সরকার প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি করে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করেছে। এক্ষেত্রে কাজ করছে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও। এর মধ্যে অন্যতম হলো- বৈদেশিক সাহায্যকারী সংস্থা ইউএসএইডের ‘সুখী জীবন প্রকল্প’। পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় ও বেসরকারি এনজিও লাইট হাউজের আয়োজনে যুবক ও কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনায় কাজ করছে এই প্রকল্পটি। এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সফল বাস্তবায়ন এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে এই কেন্দ্রে ভূমিকা সরেজমিন দেখার জন্য সম্প্রতি সাংবাদিক ও যুবসংগঠনের সদস্যদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি দল লাইট হাউজের আয়োজনে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বারিসাব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণের আওতাভুক্ত কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি পরিদর্শন করা হয়। এ সময় বারিসাব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হালিমা, ফার্মাসিট মো. আসাদুল্লাহ সিকদার উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনা কল্যাণ পরিদর্শিকা হালিমা জানান যে, কিশোরীরা তাদের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো তাদের কাজে খুব সহজে শেয়ার করতে পারে এবং আমরা তার সমস্যার আলোকে প্রয়োজনীয় সেবাসহ সহযোগিতা করে থাকি, তবে আমাদের লোকবল কম থাকলেও সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ১০ জন কিশোর-কিশোরী সেবা গ্রহণ করছে এবং মাসে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন কিশোর-কিশোরী সেবা গ্রহণ করে থাকে। লাইট হাউজের স্বেচ্ছাসেবক মো. আশরাফুল আলম যেন আমাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে তাহলে বেশি পরিমাণ কিশোর-কিশোরীকে সেবা দিতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও কিশোর-কিশোরীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে যেসব বিষয়গুলো উঠে এসছে তা হলো- কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের জন্য পৃথক একজন স্বাস্থ্য কর্মী (কাউন্সিলার) নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। কিশোর-কিশোরীদের সুবিধা অনুয়ায়ী প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেবা কেন্দ্র চালু রাখা প্রয়োজন। বিদ্যমান কৈশরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি আয়তন বৃদ্ধি করা, যাতে এক সাথে ৮ থেকে ১০ জন বসতে পারে। কৈশোর উপযোগী বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামুলক বই প্রয়োজন, প্রয়োজনে তারা বাড়িতে নিয়ে বই পড়তে পারে। খেলাধুলার উপকরণ রাখা প্রয়োজন। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের শূন্যপদে নিয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। লাইট হাউজের স্বেচ্ছাসেবকদের আরো বেশি করে কিশোর-কিশোরী সেবা কেন্দ্রে প্রেরণ করা। বর্তমানে স্যানেটারি প্যাড সরবরাহ না থাকায় সেবা গ্রহীতার সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এমতাবস্থায় দ্রুত সেনিটারি প্যাড সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। উপরোক্ত সপুরিশ মালার পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হলে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো অন্যান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল, এই কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের বাস্তবায়িত কাজগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করা এবং লেখনির মাধ্যমে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া। লাইট হাউজ জাতীয় পর্যায়ের একটি এনজিও এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এইচআইভি, এআইডিএস, জিইএস এসটিআই প্রতিরোধ, দারিদ্র্য বিমোচন, আইন সহায়তা, সুশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পাচার প্রতিরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি দেশের দরিদ্র, উপজাতি জনগোষ্ঠী, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিচালনা করে আসছে। USAID-এর আর্থিক সহায়তায় এবং পাথফাইন্ডারের ব্যবস্থাপনায় ‘Youth and Adolescent’ দের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য’ বিষয়ে ‘সুখী জীবন’ নামক একটি প্রকল্প ঢাকা (দক্ষিণ ও উত্তর) সিটি করপোরেশন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানা/উপজেলায়, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সর্বিক সহযোগিতা ও অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।