দেশের ব্যাংক খাতে আমানত ও ঋণ বিতরণ উভয়ই বেড়েছে বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জানুয়ারির তুলনায় প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। একই সময়ে ব্যাংক থেকে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার মতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নানামুখী প্রচারণার কারণে ব্যাংক খাতের ওপর গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায় গ্রাহকরা এখন আবার ব্যাংকে ফিরছেন। এছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংক ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়েছে, ‘এসব কারণে ডিপোজিট বাড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেন এ ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫.০৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিমান্ড ডিপোজিট ১.৭৯ লাখ কোটি টাকা এবং টাইম ডিপোজিট ১৩.২৬ লাখ কোটি টাকা। এর আগে জানুয়ারিতে ১৪.৮৮ লাখ কোটি টাকা ছিল। গত নভেম্বরে ব্যাংক আমানত ছিল ১৪.৮৭ লাখ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে যা বেড়ে হয়েছিল ১৪.৮৯ লাখ কোটি টাকা। গত অক্টোবরে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪.৯০ লাখ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংকখাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪.১৭ লাখ কোটি টাকা। জানুয়ারি শেষে এটি ছিল ১৪.১১ লাখ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে ১৪.৪১ লাখ কোটি, নভেম্বরে ১৪.১৮ লাখ কোটি টাকা এবং অক্টোবরে ১৪.০৩ কোটি টাকা ঋণ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাস ধরে আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। ফেব্রুয়ারিতে এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ৬.৮৬ শতাংশ। এর আগে জানুয়ারিতে এই রেট ছিল ৬.১৪ শতাংশ। অর্থাৎ একমাসের ব্যবধানে আমানতের গ্রোথ ৭২ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে। ডিসেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে, ঋণের প্রবৃদ্ধি জানুয়ারির ১৩.৮৯ শতাংশ থেকে কমে ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ১৩.২৬ শতাংশ।
গত জানুয়ারি মাসে আমানতের ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়েছে অধিকাংশ ব্যাংক। ঋণের ইন্টারেস্ট রেট বাড়লেও সেটি আমানতের তুলনায় কম। ফলে ব্যাংকগুলোর ইন্টারেস্ট আয় জানুয়ারির তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকগুলোর আমানতের এভারেজ ইন্টারেস্ট রেট জানুয়ারির ৪.২৯ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৩১ শতাংশ এ। ডিসেম্বরে এটি ৪.২৩ শতাংশ ছিল। আগের বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ হার ৪.০২ শতাংশ ছিল। ঋণের এভারেজ ইন্টারেস্ট রেট জানুয়ারির তুলনায় ৩ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৭.২৭ শতাংশ। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকখাতের ইন্টারেস্ট আয়ে। জানুয়ারির ২.৯৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে এ আয় হয়েছে ২.৯৬ শতাংশ। গত ১৫ জানুয়ারি ৬ শতাংশ এ বেঁধে দেয়া আমানত ইন্টারেস্ট রেটের সীমা তুলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই সাথে কনজিউমার লোনে সুদহার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ করে দেয় তারা। মূলত এরপরই আমানত বাড়ানোর লক্ষ্যে ইন্টারেস্ট রেট বাড়ায় ব্যাংকগুলো। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানান, গত দুয়েক মাস ধরে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে জমা হচ্ছে। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোও বেশ ভালোরকমের আমানত পাচ্ছে। এছাড়া ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এখন অনেক সতর্ক হয়ে গেছে। আগে দেওয়া অনেক ঋণ খেলাপি হওয়ায় বুঝেশুনে লোন দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সেই সঙ্গে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট থাকায় সব ব্যাংকের অনেক বেশি ঋণ দেয়ার মতো অবস্থাও নেই। এসব কারণেই ঋণ বিতরণ খুব বেশি বাড়েনি।