আমদানিতে ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

ডলার-সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আমদানিতে ঋণপত্র খোলার হার কমেছে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। একই সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ১ দশমিক ২২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আমদানি লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খোলার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৫৫১ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ ২০২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এলসি খোলা কমেছে ১ হাজার ৩৯৪ কোটি ডলার বা ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ভোগ্যপণ্য, মধ্যবর্তী পণ্য, ক্যাপিটেল মেশিনারি এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে এসময় পেট্রোলিয়ামের আমদানি ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ২৪ দশমিক ৫১ শতাংশ।

এ ময় ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয় ৫৪৯ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা কমেছে ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ক্যাপিটেল মেশিনারির জন্য এলসি খোলা হয় ২১৪ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিলো ৪৬৬ কোটি ডলার। সেই তুলনায় ক্যাপিটেল মেশিনারির ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৫২ কোটি ডলার বা ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত কারখানার সম্প্রসারণ এবং নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন করেন। এর ফলে শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। একই সঙ্গে দেশে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয় এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। এছাড়া সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। নতুন বিনিয়োগ করতে না পারায় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন বা সম্প্রসারণ কমিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আলোচ্য সময়ে মধ্যবর্তী পণ্যের ৩০ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং শিল্পের কাঁচামালের ৩০ দশমিক ০৫ শতাংশ এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে।

করোনার ধাক্কা সামলে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলো দেশের অর্থনীতি। এমন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৪৫.৫২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৫৯.৪৬ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা বিধিনিষেধ ও এক্সপোর্ট অর্ডার কমায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে আগের একই সময়ের তুলনায় আমদানি এলসি খোলা প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের মতো কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৪৫.৫২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৫৯.৪৬ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। অর্থাৎ, এলসি খোলা কমেছে ২৩.৪৫ শতাংশ।

বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলার সংকট কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি এলসি খোলায় ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন রাখাসহ নানা কড়াকড়ি আরোপ করে। ফলে ব্যবসায়ীরা ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও বিলাস দ্রব্য আমদানিতে কিছুটা নিরুৎসাহিত হয়। এছাড়া ডলারের যোগানে টানাটানি থাকার কারণে ব্যাংকগুলোও এলসি খোলার ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যায়। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের আমদানি এলসি খোলার আগে রিপোর্ট করার নির্দেশনা দেয় ব্যাংকগুলোকে। রিপোর্ট করা এসব এলসির পণ্যের আন্তর্জাতিক মূল্য যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন করার নীতি নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ওভার ইনভয়েসিংও কিছুটা কমে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এলসি ওপেনিং কমে যাওয়ার এগুলোই অন্যতম কারণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মনেটারি ভ্যাল্যু বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি এলসি খোলা হয়েছে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য। গত ৮ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৬৮ বিলিয়ন ডলার বা ৩০.০৫% কমে এই খাতে এলসি খোলা হয়েছে ১৫.৫৬ বিলিয়ন ডলারের। এসব ম্যাটেরিয়ালের একটা বড় অংশ আমদানি হয় আরএমজি রপ্তানির কাঁচামাল হিসেবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা কমিয়েছেন তারা।