১১৬ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ খালেকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত মঙ্গলবার ডিএমপির মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। গত ৫ এপ্রিল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সিইও তরফদার জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক এফও মো. জাহিদুল হক, এমএ খালেকের স্ত্রী সাবিহা খালেক, ছেলে শাহরিয়ার খালেদ রুশো, মেয়ে মিস. শারওয়াত খালেদ, জামাতা তানভিরুল হক, মেয়ের শ্বশুর মো. ফজলুল হক, আবুল কাশেম মোল্লা, রাশেদ মোহাম্মদ মাজহারল, খশরুবা সুলতানা শিল্পি, শেখ ইউসুফ আলী, মাহবুবা সুলতানা, মিসেস দিলরুবা সুলতানা, মো. নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মোস্তফা ও কাজী শাহরিয়ার। সিআইডি জানায়, ২০০৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এমএ খালেক ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যানের পদে থেকে নিজে ও তার আত্মীয় স্বজনসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্টরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রায় ১১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ পূর্বক সম্পদে রূপান্তর ও বিদেশে পাচার করেছেন। ওই অভিযোগে সিআইডি অনুসন্ধান শেষে ৪ এপ্রিল এমএ খালেকসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করে। মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লি. একটি পাবলিক লি. কোম্পানি, যা জয়েন্ট স্টক অ্যান্ড ফার্মের অধীনে নিবন্ধনকৃত। এটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ট্রেক নং-২২৬) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ট্রেক নং- ১৩৮) এর সদস্য। আসামি এমএ খালেক প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার, নিজ প্রভাব বিস্তার করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের টাকা অপরাপর আসামিদের সহায়তায় লেয়ারিং করে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং করেছেন। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হোদাভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোং-এর বিশেষ রিপোর্টে দেখা যায়, ঘটনার সময়কালে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিনিয়োগকারী ৮৯ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৭ টাকার চেক বা নগদ টাকা জমা করেন। যা বিনিয়োগকারীদেও বিও হিসাবে দেখানো হলেও কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা হয়নি। অর্থাৎ ভুয়া জমা দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া, আসামিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিনিযোগকারীরা বিভিন্ন সময়ে মোট ১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকার চেক জমা করেন, কিন্তু বিভিন্ন কারণে (অপর্যাপ্ত জের, স্বাক্ষরে গড়মিল, টাকার অঙ্ক ভুল লেখা) চেকগুলো ডিজঅনার হয়, যা বর্ণিত কোডে রিভারসাল জমা দেখানো হয়েছে। অডিট প্রতিবেদনে দেখা যায়, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে কোম্পানির হিসাবে যোগফলে ২২ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ টাকার স্থলে ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ বসিয়ে তথ্যের গড়মিল করে ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। সিআইডি আরো জানায়, প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ খালেক তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের অপারেটকৃত বিও হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে ২টি চেক ইস্যু করে ৫০ লাখ টাকা লেয়ারিং করে আবুল কাসেম মোল্লা নামক প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের একাউন্টে জমা করে আসামি এম. এ. খালেক তার প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ব্যক্তিগত একাউন্টে হস্তান্তর করে নিজে আত্মসাৎ করেন।