স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কৃষিবিষয়ক আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত শিক্ষা কার্যক্রমে প্রবর্তনে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং টেকসই ও লাভজনক কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের ওপর জোরোরোপ করেছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। গতকাল রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত রেনেসাঁ হোটেলে ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থাকে স্মার্ট কৃষিতে রূপান্তর: ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগদান করেন ডব্লিউএফপি বাংলাদেশ’র আবাসিক প্রতিনিধি ডমিনিকো স্কেলপেলি। সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, আমাদের কৃষি ও অ্যাগ্রো-প্রসেসিং খাতের আকার প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রায় ১৫৪টি দেশে ৭০০ কৃষি পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। তিনি জানান, জিডিপিতে আমাদের অ্যাগ্রো ও ফুড প্রসেসিং খাতের অবদান প্রায় ০.২২% এবং আমাদের কৃষি পণ্যের ভ্যালু এডিশন, পণ্য বহুমুখীকরণ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার, দক্ষতার স্বল্পতা এবং খাদ্যের মান নিশ্চিতকরণ প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জের সাথে সামঞ্জ্যতা বজায়ে রাখতে তিনি ন্যানো টেকনোলোজি, নতুন নতুন কৃষি মেশিনারিজ ব্যবহারের ওপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেন, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি জানান, অর্থনীতির উন্নয়নের অন্যতম খাত হলো কৃষি খাত, যেটি জিডিপিতে ১২% অবদান রাখার পাশাপাশি ৩৮% কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে এবং শিল্প খাতের কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকে। তিনি বলেন, কৃষি খাতে সরকারের ভর্তুকি জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। মন্ত্রী বলেন, সামাজিক সকল সূচকে আমরা ক্রমাগত ভালো করছি। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৭টিই কৃষির সাথে সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত, তাই কৃষি খাতের সার্বিক উন্নয়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। কৃষিমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিক ও লাভজনক কৃষিব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং আধুুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। সার্বিকভাবে কৃষি খাতের উন্নয়নে তিনি সরকারের পক্ষ হতে নীতিসহায়তার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সংরক্ষণের জন্য বহুমুখী হিমাগার নির্মাণের মনোযোগী হতে হবে, একই সাথে সড়ক, জল ও রেলপথে পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমাদের কে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের দিকে অগ্রসর হতে হবে এবং এক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ জরুরি। তিনি বলেন, প্রচলিত কৃষিব্যবস্থা থেকে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার ব্যবস্থায় উন্নয়ন সময়ে দাবি যেটি আমাদের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি এ লক্ষ্যে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সম্মানিত অতিথি’র বক্তব্যে ডব্লিউএফপি বাংলাদেশ’র আবাসিক প্রতিনিধি ডমিনিকো স্কেলপেলি বলেন, বাংলাদেশ ক্রমশ বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচেছ, তবে সেক্ষেত্রে কৃষি খাতে মূল্য সংযোজনের ওপর জোর দেয়া জরুরি। তিনি বলেন, স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের মূল লক্ষ্য হলো পণ্যের মান উন্নয়ন ও পণ্যের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। বাংলাদেশের তরুন জনগোষ্ঠীকে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের সাথে বেশি হারে সম্পৃক্তকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাগ্রিকালচারাল ইকোনোমিক্স’র ইমিরেটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ড. এমএ সাত্তার মন্ডল। তিনি বলেন, জাতীয় কৃষি নীতিমালা-২০১৮ তে ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করেছে। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ২.৮ বিলিয়িন মার্কিন ডলারের কৃষি মেশিনারিজ খাতের বাজার রয়েছে। সেই সাথে ব্যাংক লোন প্রাপ্তির সহজীকরণ, সহায়ক কর ও শুল্ক কাঠামো, দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার এবং অটোমেশন স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থার জন্য খুবই জরুরি। এছাড়া সারা দেশে কোল্ডস্টোরেজ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপ করেন এবং এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের জন্য স্মার্ট স্টেকহোল্ডার জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় এক্যুয়ালিংকয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল গফুর বাশির, আইফার্মের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ ইফাজ, এটুআই’র কনসালটেন্ট (ফোরআইআর) আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলম, এসিআই অ্যাগ্রি-বিজনেস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ড. এফএইচ আনসারি, প্রাণ-আরএফএফ গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী অংশগ্রহণ করেন। আলোচকরা কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ, কোল্ডস্টোরেজ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর জোরারোপ করেন। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এসএম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান) ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ঢাকা চেম্বারের সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।