সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালা বাতিল চান ব্যাংকাররা
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে মেধা তালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতির প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে দি অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ। গতকাল সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২ বাতিলসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠনটি। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে করা সংগঠনটির দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে বিতর্কিত নীতিমালা বাতিল করতে হবে; সব পর্যায়ের প্রমোশনে টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরত প্রদান করতে হবে; কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বিতর্কিত নীতিমালা চাপিয়ে দেয়ার পরিবর্তে অপরিহার্য পছন্দ রূপে সর্বমহলে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য অপরিবর্তনীয় স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ণ করতে হবে এবং স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ণের আগ পর্যন্ত আগের নীতিমালার ভিত্তিতে পদোন্নতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এবং বিষয়টি পর্ষদ কর্তৃক পাস করিয়ে নিতে হবে। মূলত মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য শত শত সোনালী ব্যাংকের কর্মী। এতদিন শূন্যপদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ নতুন আইন চালু হয়েছে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতির ভাইভার জন্য শুধু সিনিয়রিটি তালিকার কর্মকর্তাদের কল করা বা বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা। গত ১০ এপ্রিল এবিবির পক্ষ থেকে গভর্নরকে এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ৮১০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অফিসার বা সমমান থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বা সমমান পদ পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য শূন্যপদের চেয়ে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে প্রতিটি সম্ভাব্য শূন্যপদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিন জন (১:৩) প্রার্থী নির্বাচনী সাক্ষাৎকার বা বাছাইয়ের জন্য বিবেচ্য হবেন।’ যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২ এর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ মেধা তালিকার কর্মীরা পদোন্নতি তো দূরের কথা সাক্ষাতৎকারেও অংশ নিতে পারবেন না। চিঠিতে সংগঠনটির দাবি, ন্যায়প্রত্যাশী কর্মকর্তারা সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। স্মারকলিপি প্রদানকালে চেয়ারম্যান ও এমডি কেউই মেধাবীদের মূল্যায়নের কোনো যুক্তিসংগত আশ্বাস দিতে পারেননি। বরং তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন ও বিভিন্ন হুমকিমূলক কথা বলেছেন, যা শুদ্ধাচারের সঙ্গে যায় না। স্মারকলিপির বিষয়টি সমাধান না করেই ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে এজিএম থেকে ডিজিএমের নির্বাচনি সাক্ষাৎকার। হাজারো ব্যাংকিং সমস্যার সমাধানে কোনো মাথাব্যথা নেই। সব ফোকাস পদোন্নতি নীতিমালায়।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, একটি মীমাংসিত ইস্যুকে এমনভাবে আলোচনার বিষয়বস্তু বানিয়ে ফেলা হয়েছে যেন এটাই ব্যাংকের একমাত্র সমস্যা। মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতিযোগ্য পদ না থাকার পরও সুপারনিউমেরারি হিসেবে তারা পদোন্নতি পাচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে একাধিক কর্মকর্তাকে সুপারনিউমেরারি হিসেবে পদোন্নতি দেয়াতে সেখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তাহলে পদোন্নতি জটিলতা এড়াতে সোনালী ব্যাংকসহ সব ব্যাংকে সুপারনিউমেরারি পদোন্নতি বন্ধ থাকবে কেন? মূলত ঊর্ধ্বতন মহলে দেনদরবার করে যৌক্তিক বিষয়ে সমাধান খোঁজার পরিবর্তে নিচের দিকের কর্মকর্তাদের ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া অনেক সহজ। তাই সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের এখন গিনিপিগ হতে হচ্ছে। থার্ড ক্লাস বা ফোর্থ ক্লাস কর্মচারীদের ব্যাংকে সিবিএ করার অধিকার থাকলেও অফিসারদের কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংগঠন বা অফিসার্স ফোরাম নেই। তাই নির্বাহী কর্মকর্তা তথা অফিসারদের ন্যায়সংগত দাবি নিয়ে কেউ আওয়াজ তোলে না।