আগামী বাজেটে এডিপির আকার বাড়ছে না

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

নানা কারণে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার খুব একটা বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের চেয়ে মাত্র ১৭ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থ বছরের এডিপিতে ১ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব খাত থেকে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাকি ৮৪ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে সংগ্রহ করা হবে।

সূত্র জানায়, সুদ ও ভর্তুকিতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বেশি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। চলতি বছরের বাজেটের তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ মাত্র ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী বাজেটে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। যেখানে আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এডিপির আকার বেড়েছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। এবার বাড়ছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নে ৯৪ হাজার কোটি টাকার বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। যদিও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার কমিয়ে করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

এদিকে, প্রতি অর্থবছরেই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোকে বড় ধরনের বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা তা খরচ করতে পারে না। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হয়, সেখানে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ।

আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি আট মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৮২ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার। এ বছর এডিপিতে বরাদ্দ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়ন মাত্র ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ। গত পাঁচ অর্থবছরের হিসাবে এর আগে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। খরচ হয়েছিল ৮৪ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন ছিল সবচেয়ে কম, সে সময় এর পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। খরচ হয়েছিল ৭২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে, সেই অর্থবছরে আট মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এছাড়া একক মাস হিসেবে শুধু ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ করেছে ১০ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা, বাস্তবায়নের হার ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর আগের বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাস্তবায়ন হয়েছিল ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। খরচ হয়েছিল ১৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১৪ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা চেয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সরকারের তহবিল থেকে ৪ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন সহযোগী থেকে ১০ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। চলমান ৩৫টি প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ চেয়েছে এই মন্ত্রণালয়টি।

প্রতি বছর এডিপির বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করতে না পারলেও বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বরাদ্দ বাড়াতেই হবে। এভাবেই সবাই এগোয়। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোও একই কাজ করে। আমরাও উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি বাডানোর বিষয়ে বিচার বিশ্লেষণ করতে পারি। বাজেটের প্রক্ষেপণ করার সময় এটা বাড়িয়েই করতে হবে।

আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে সেতু বিভাগ ৮ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা চাহিদা দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ছয় হাজার উনিশ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে চেয়েছে দুই হাজার ৫৬৩ টাকা। আর নতুন অননুমোদিত প্রকল্পের জন্য চেয়েছে ২৮১ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এডিপিতে ৫ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। এর মধ্যে সরকারের তহবিল থেকে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে পাওয়া যাবে ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা।

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ৩৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। এর মধ্যে সরকারের তহবিল থেকে ২২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে চেয়েছে ৯ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। এবং অননুমোদিত সম্ভাব্য প্রকল্পের জন্য সরকারের তহবিল থেকে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ।