আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। এরই মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণিপেশা ও ব্যবসায়ীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দাবি উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সাধারণ করদাতাদের ক্ষেত্রে এ সীমা বার্ষিক ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হতে পারে। এছাড়া নারী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের ক্ষেত্রেও করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়ানো হতে পারে বলে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে বার্ষিক ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনো কর নেই। তবে ৩ লাখের বেশি থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ৫ শতাংশ হারে কর রয়েছে। ১০ লাখের বেশি থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১০ শতাংশ, ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ কর দিতে হয়। অন্যদিকে, নারী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা। প্রতিবন্ধী করাদাতাদের জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়। এর আগে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়েছিল। সূত্র জানায়, বিশ্বজুড়ে মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রভাব এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়ায় অনেকের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ চলতি বাজেটেই করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু এটি অপরির্তিত রাখা হয়। তবে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে মূল্যস্ফীতির হার অত্যধিক বাড়তে থাকায় ওই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং অর্থনীতিবিদদের অনেকেই এনবিআর ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
তাদের মতে, গত কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের আশপাশে রয়েছে। সংসারের খরচ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। তাই সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিত।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ৭৫ লাখের বেশি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএনধারী) আছেন। তাদের মধ্যে ২৮ লাখের মতো টিআইএনধারী প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন জমা দেন, যদিও সব টিআইএনধারীর রিটার্ন দেয়া বাধ্যতামূলক। করহারের ন্যায্যতা নিশ্চিত করা গেলে রিটার্ন জমার পরিমাণ আরো বাড়বে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার সুপারিশ করে। আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তাই মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা উচিত।