চাঁদ দেখা সাপেক্ষে মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর আগামী ২২ বা ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। প্রিয়জনের সাথে ঈদ আনন্দ করতে লাখ লাখ মানুষ যাচ্ছে বাড়ি। এরই মধ্যে অনেকেই করছেন ঈদের কেনাকাটা। ঈদে বাসাবাড়িতে নতুন নতুন খাবার রান্না করা হয়। এজন্য বেশ চাহিদা থাকে মশলা পণ্যে। এরই মধ্যে ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে বেড়ে গেছে বিভিন্ন মশলার দাম। গত দুই দিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাড়তি দামে মশলা বিক্রির দৃশ্য। ক্রেতারাও অনেকেই বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। বাজারে দেখা যায় এলাচ, জিরা, রসুন, ধনিয়ার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। কারওয়ান বাজারের পাইকারি ও খুচরা মশলার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বড় এলাচ প্রতি কেজি ১৬০০-২৬০০ টাকা, মাঝারি এলাচ ১৪০০-১৫০০ টাকা, ছোট এলাচ ১২০০-১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বুধ ও গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৩০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয়েছে ৬৩০ থেকে ৬৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে কমপক্ষে ৭০ টাকা। দুই মাস আগেও জিরার দাম ছিল ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য মশলার মধ্যে লবঙ্গ ১৩৫০-১৫০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ৯০০-১০০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ৬২০-৭২০ টাকা, দারুচিনি ৩৮০-৫৫০ টাকা, ধনিয়া ১২০-১৭০ টাকা, মেথি ৩৫০-৪০০ টাকা, তেজপাতা ১৫০-২০০ টাকা, মিষ্টি জিরা ৪০০-৫০০ টাকা, কালিজিরা ৫৫০-৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মশলা গড়ে ১০-১০০ টাকা বা কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি কেজি প্রতি বেড়েছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে। কারওয়ান বাজারে মশলা কিনতে এসে অনেকটাই দাম শুনে ক্রেতা বার বার জানতে চান গত সপ্তাহের চেয় এতো দাম বেশি কেন? আজিজুল ইসলাম জিরা এবং এলাচ কেনা নিয়ে অনেকটাই তর্কই করলেন ব্যবসায়ীর সাথে। বিক্রেতার সাফ জবাব, ‘নিলে নেন নয়তো অন্য দোকান দেখেন।’ আজিজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে বলেন, এলাচ গত সপ্তাহে কম করে কিনেছি এখন কেজিতে ১০০ টাকার বেশি এটা ভাবা যায়! জিরা ৮০ টাকা বেশি কেজিতে। সব দোকানেই একইরকম দাম চাচ্ছে হয় ১০-১৫ এদিক সেদিক। এতো বেশি দাম সপ্তাহের ব্যবধানে মানাই যায় না। রবিউল হাসান একজন ব্যাংকার। পঞ্চগড়ে বাড়ি কিন্তু ঈদে বাড়ি যাবেন না। ছোট বাচ্চা হওয়ার কারণে গরম আর যাত্রাপথের ভোগান্তিতে শিশুর সমস্যা হতে পারে এজন্য ঈদ ঢাকায় করবেন। ঈদের ছুটিতে বেশ ফাঁকা রাস্তায় আসেন বাজার করতে। বাজারের দাম শুনে সেও হতবাক। রবিউল বলেন, গরুর মাংস ৭৮০ টাকা দিয়ে কিনেছি ৪০ টাকা কেজিতে বেশি নিয়েছে। মশলা কিনেছি সেখানেও বেশি দাম। না কিনেও উপায় নেই। হয়তো চলে গেলাম আবার এসে যদি বাড়তি দামেই কিনতে হয় তার চেয়ে কিনে বাসায় ফেরাই ভালো। কারওয়ান বাজারের মশলা বিক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, আসলে অনেক বিক্রেতারা বাড়তি দাম কেন বার বার জানতে চায়। আমরাওতো বেশি দামেই কিনে আনতেছি। বাধ্য হয়ে একটু বেশি দামে বেচতে হচ্ছে। জিরার দাম নিয়ে বলেন, পাইকারি মহাজনরা কয় আমদানিতে খরচ বেশি তাই দাম বেশি। পাইকারি একাধিক মশলা বিক্রেতারা জানান, জিরার দাম বেড়েছে এটা ঠিক। কারণ হিসেবে জিরা আমদানিতে ডিউটি ফি বাড়ানো হয়েছে জানান। রাজধানীর হাতিরপুল বাজার, ফার্মগেট কাঁচাবাজারেও দেখা গেছে বাড়তি দামের দৃশ্য। ফার্মগেট কাঁচাবাজারে এসে এলাচের দাম শুনে অনেকটা বিরক্ত প্রকাশ করেন আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, মধ্য রোজায় যে এলাচ কিনেছি ১৮০০ টাকা কেজি সেই একই এলাচ দাম চায় ২১০০ টাকা। ৩০০ টাকা বাড়তি। বাজারে বিভিন্ন আকারের এলাচ পাওয়া যায়। এর মধ্যে বড় এলাচ প্রতি কেজি ১৬০০-২৬০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি এলাচ আরেকটু কম অর্থাৎ ১৪০০-১৫০০ টাকা, ছোট এলাচ ১২০০-১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতাদের অবস্থা দাম শুনেই নাজেহাল। যারা এক সপ্তাহ আগে বাজার করেছেন তাদের সংসারের খরচে অনেকের হিসাব মেলে না।
এদিকে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ধনিয়া। দাম বেড়েছে পেঁয়াজেরও। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ৭০-১০০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১২০-১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ভ্যানে ঘুরে ঘুরে এলাকা মহল্লায় পেঁয়াজ বিক্রি করেন রব মিয়া। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে একেক পেঁয়াজ একেকরকম দাম। একটু শুকনা হলে একরম একটু ভেজা থাকলে দাম কম হয়। তবে দাম একটু বাড়ছে পেঁয়াজের বলেন তিনি।