ঢাকা ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশকে ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশকে ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশকে উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে উত্তরণে সহযোগিতা করতে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ আগামী ৪ বছরে প্রতি বছর ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ সহায়তা দেবে। ২০২৩-২৭ অর্থবছরের জন্য নতুন কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কে (সিপিএফ) এই ঋণ পরিকল্পনার রূপরেখা দেয়া হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতিষ্ঠানটির বোর্ডের সভায় যোগ দেবেন। এ সভা শুরুর আগেই বিশ্বব্যাংকের বোর্ড এই ঋণের অনুমোদন দেবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বছরে ২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে তৈরি করা আসন্ন সিপিএফ সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় স্থান পেয়েছে।

বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আর্থসামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এতে আটটি লক্ষ্যমাত্রা থাকবে।

বোর্ডের অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা খসড়া নথিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বব্যাংক গ্রুপ সিপিএফের মেয়াদকালে বলিষ্ঠ সম্পৃক্ততা আশা করে।’ বাংলাদেশের জন্য দরিদ্র দেশগুলোকে রেয়াতি অর্থায়ন প্রদানকারী বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ সংগঠন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) বার্ষিক বরাদ্দ বছরে দেড় থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

খসড়ায় আরো বলা হয়, ‘চলমান প্রকল্পের আওতায় ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার তহবিল বিতরণের পাশাপাশি নতুন এই অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে বেশ কিছু রূপান্তরমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’

উল্লেখযোগ্য রূপান্তরমূলক প্রকল্পগুলোর মাঝে রয়েছে যমুনা নদীর ওপর অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ, ঢাকার নদীগুলোর বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার, বে টার্মিনাল প্রকল্প, সরকারি খাতের আধুনিকায়ন এবং মাধ্যমিক শিক্ষার গতি বাড়ানো।

একই সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সহায়তাকারী বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) তাদের বিনিয়োগ কর্মসূচিকে প্রতি বছর ৯০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার চেষ্টা করবে। বিশ্বব্যাংকের অপর অঙ্গ সংগঠন মাল্টিল্যাটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি (এমআইজিএ) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি বিমা দেয়ার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। এমআইজিএ জ্বালানি ও উৎপাদন খাতের ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের পোর্টফোলিওর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

আইএফসির সহযোগিতায় এমআইজিএ তার গ্যারান্টি ইন্সট্রুমেন্টের মাধ্যমে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে (এফডিএ) সমর্থনের পাশাপাশি ট্রেড ফাইন্যান্স সাপোর্ট ইন্সট্রুমেন্ট কাজে লাগানোর সুযোগ খুঁজতে থাকবে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাজারে নতুন উদ্যোগের প্রবেশ এবং তাদের প্রবৃদ্ধি বেসরকারি খাতকে আরো বৈচিত্র্যময় হতে সহায়তা করবে। পরবর্তীকালে এটি বাংলাদেশকে একটি বৈচিত্র্যময় ও প্রতিযোগিতামূলক বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সহায়তা করবে। এর জন্য সংস্থাটি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন ও এফডিএর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাবে।

এটি প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমকে সমর্থন করবে এবং তাদের হাতে থাকা বিভিন্ন উপকরণের উপযুক্ত ব্যবহারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতিমালাকে সহজ করবে। যার ফলে নতুন স্থানীয় ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বাজারে প্রবেশের পথ সুগম হবে। বিশ্বব্যাংক সিপিএফের উল্লিখিত মেয়াদকালে জ্বালানি সম্পদের উপযোগী ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতের লক্ষ্যেও কাজ করবে। খসড়া নথিতে আরও বলা হয়, ‘জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল থাকার কারণে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে এবং এ ঘটনায় সমগ্র খাতের ভঙ্গুরতা দৃশ্যমান হয়েছে।’

নতুন সিপিএফের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক বোর্ড ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা এবং ২৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করবে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে তিনটি প্রকল্পের জন্য ১ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তিও স্বাক্ষরিত হবে। আগামী ১ মে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার ফলাফল তুলে ধরা হবে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় স্বাধীনতার মাত্র ৪ দশকের মধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পেরেছে বলে নথিতে মন্তব্য করা হয়। শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের বোর্ডের সভায় বক্তব্য দেন এবং একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন। তিনি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পরবর্তী সভাপতি অজয় বাঙ্গা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত