নিত্যপণ্যের মধ্যে চিনিও অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পণ্যটির এখন আকাশ ছোঁয়া। সরকারি চিনির দাম নির্ধারণ করে দিলেও সে অনুযায়ী চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। সবশেষ সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী খোলা চিনির কেজি ১০৪ টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু সে নির্দেশ অমান্য করে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা দরে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ২৬ থেকে ৩১ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। ভোক্তারা বলেছেন, সরকার বলেছে দাম কমিয়েছে, কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখছি ব্যবসায়ীরা উল্টো দাম বাড়িয়েছেন। প্রয়োজন থাকায় চিনি কিনতে হচ্ছে বেশি দামেই। সরকারের উচিত অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া। ভোক্তাদের অভিযোগ স্বীকার করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, সরকার চিনির নতুন দাম নির্ধারণের পর থেকে নতুন করে বাজারে সংকট তৈরি করেছে বড় বড় কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলো ঈদের সময় দাম বাড়িয়েছে, এখনো সেই দামেই বিক্রি করছে। তারাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। রাজধানীর মালিবাগ এলাকার ফ্যামিলি মার্ট জেনারেল স্টোরের মালিক মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের সময় থেকে খোলা চিনি ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি। প্যাকেটজাত চিনি এখন চোখেই দেখি না।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে কোম্পানিগুলো চিনি দেয় না, অনেক বলাবলির পর ৩০ কেজি চাইলে ৫ থেকে ১০ কেজি পাই। আমরা কী করব?’ পাশের দোকান ভাই ভাই জেনারেল স্টোরের মালিক আব্দুল বারেক বলেন, ‘প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি এক বছর হলো। এখন খোলা চিনিও বিক্রি বন্ধ করে দেব।’ কেন বন্ধ করে দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১ কেজি চিনি বিক্রি করে লাভ হয় ৫ টাকা। আর এই চিনির জন্য কাস্টমার ও কোম্পানির লোকদের কাছে যে পরিমাণ কথা বলতে হয় তাতে পোষায় না। ১৫ দিন হলো এক বস্তা চিনির জন্য অর্ডার দিয়েছি, কিন্তু কোম্পানি এখনো চিনি দেয়নি। কীভাবে ব্যবসা করব?’ মালিবাগের বাসিন্দা শওকত জামান বলেন, ‘রোজার শেষের দিকে ১২০ টাকা কেজিতে চিনি কিনেছি, আজ (শনিবার) দেখছি ১৩৫ টাকা কেজি। কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখেছি, ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকার কম কেউ বিক্রি করছে না। আপাতত চিনি কিনলাম না। কয়েক দিন বাজার দেখে তারপর কিনব।’
বনশ্রীর মুদি দোকানি আল-আমিন বলেন, ‘পাইকারি বাজারে চিনির সংকট। এখন যে চিনি রয়েছে এই চিনি ঈদের আগে কেনা, বড় জোর আর দুই-তিন দিন বিক্রি করতে পারব। তারপর নতুন করে চিনি না পেলে বিক্রি করতে পারব না।’ তিনি বলেন, ‘আমি ঈদের আগেই চিনি বিক্রি করেছি ১৩৫ টাকায়। আজও সেই দামেই বিক্রি করছি। দাম আমি বাড়াইনি। চিনি পাইকারিতে কেনা ১২৬ টাকা। সব খরচ মিলে ১৩৫ টাকায় বিক্রি না করলে আমাদের লাভ থাকে না।’
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সরকার খোলা চিনির দাম ৩ টাকা কমিয়ে ১০৪ টাকা নির্ধারণ করে। এর আগে সরকার নির্ধারিত দাম ছিল ১০৭ টাকা, কিন্তু বাজারে পাওয়া যেত ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। ৬ এপ্রিল দাম কমানোর পর থেকে বড় কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা চিনি সরবরাহ সীমিত করে দেয়। এতে চিনির দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। শুধু তাই নয়, বড় ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ীদের চিনি কেনার সময় কোনো রসিদও দিচ্ছেন না। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চিনির বাজারে অস্থিরতার কারণে এখন অনেকেই চিনি বিক্রি করছেন না। ঈদের আগে ৫০ কেজি চিনির বস্তা বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৯০০ থেকে ৫ হাজার ৯৫০ টাকায়। বর্তমানে এক বস্তা চিনিতে দাম বেড়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৌলভীবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, বড় কোম্পানিগুলোর কেউ সরকার নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করছে না। তারা পাইকারি দর নিচ্ছে ১২৫ টাকা। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের রসিদ দিচ্ছে না। আবার সরকারের কাছে দেখাচ্ছে নির্ধারিত দামেই (১০৪ টাকা) বিক্রি করছে!