ইন্টারনেটের বদৌলতে বদলে গেছে নাটক-সিনেমা প্রচারের ধরন। মূলধারার সম্প্রচার মাধ্যমের সঙ্গে অনেকটা পাল্লা দিয়েই ওভার দ্য টপ তথা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অনেক নির্মাতা তাদের নাটক-সিনেমা প্রচার করছেন। দর্শকও রীতিমতো টাকা দিয়ে গ্রাহক হয়ে ওটিটিতে প্রচারিত কনটেন্টগুলো উপভোগ করছেন। দেশীয় ওটিটির মধ্যে রয়েছে চরকি, বিঞ্জ, বঙ্গ, আইস্ক্রিন, র্যাবিটহোল, বায়োস্কোপ, টফি ইত্যাদি। এসব ওটিটির সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সরকারের আইসিটি বিভাগও একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
এই প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য বাণিজ্যিকভাবে অর্থ খরচ না করে দেশীয় প্রোগ্রামার ও উদ্ভাবকদের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিষয়টির জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আইসিটি বিভাগের অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্পকে।
বিষয়টিকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য এটুআই একটি প্রতিযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রাপ্ত ধারণা থেকে সর্বশ্রেষ্ঠটিকে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে রূপ দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘এখন আমরা নিজেরা একটা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছি। তরুণদের সৃজনশীল মেধার বিকাশ ঘটাতেই এই আয়োজন।’ জানা যায়, তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষা-তথ্য-বিনোদন (এডুইনফোটেইনমেন্ট) ভিত্তিক একটি উদ্ভাবনী ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির লক্ষ্যে গত বছর শুরু হয় আইডিয়া প্রতিযোগিতা। ‘ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ-২০২২’ এই প্রতিযোগিতার লক্ষ্য- এমন একটি ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যাতে পরবর্তী সময়ে শিক্ষা, কৃষি, তথ্য, বিনোদনসহ বিভিন্ন খাতের চাহিদা অনুযায়ী মানসম্পন্ন ও খাতভিত্তিক কনটেন্ট থাকবে, যা একটি শিক্ষা-তথ্য-বিনোদনের (এডুইনফোটেইনমেন্ট) ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেশের ১৩ থেকে ৪০ বছর বয়সী তরুণসহ সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে পছন্দের কনটেন্ট পৌঁছে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেশীয় উদ্ভাবকদের গত ১৭ জানুয়ারির মধ্যে স্ব-স্ব আইডিয়া প্রস্তাবনা আকারে জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ১৪টি সেরা আইডিয়া জমাদানকারী উদ্ভাবকদের নিয়ে আয়োজন করা হয় বুটক্যাম্প। বুটক্যাম্পে বিচারকদের সামনে উদ্ভাবকরা তাদের উদ্ভাবনী আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। আরো একাধিক ধাপ পেরিয়ে সেখান থেকে সবচেয়ে ভালো বা বিজয়ী আইডিয়া জমাদানকারীদের নিয়মিত মেন্টরিং করার পাশাপাশি প্রস্তাবিত আইডিয়ার গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য সিড মানি হিসেবে বিভিন্ন ধাপে ১ কোটি টাকা দেয়া হবে। এটুআই সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতিযোগিতায় ১১৫টি ওটিটির ধারণাপত্র জমা পড়ে। এর মধ্য থেকে ১৪টি ধারণাপত্র নিয়ে বুটক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১০ মে আয়োজকদের টেকনিক্যাল ইভ্যালুয়েশনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে কারিগরি মূল্যায়ন করা হবে, যার ভিত্তিতে এটুআই ইনোভেশন ফান্ড নির্বাহী কমিটির কাছে বিজয়ী নির্বাচনের জন্য চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হবে।
বর্তমানে মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেল, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টগুলোতে দেশীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতি রাখার পাশাপাশি বিতর্কিত কনটেন্টগুলো পরিহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এসব কনটেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে অটোমেটিক ভেরিফিকেশন সিস্টেম ব্যবহার এবং কনটেন্টগুলো সঠিকভাবে আর্কাইভের ব্যবস্থা গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ডকুমেন্টারিও প্রচারিত হবে। সবার জন্য এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মটিতে একসেসিবিলিটি নিশ্চিত করতে ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের উপযোগী কনটেন্ট প্রচার করতে উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়েও বক্তব্য এসেছে। এছাড়া প্ল্যাটফর্মটি ২০৪১ সালের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে গৃহীত যাবতীয় উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে প্রচারের মাধ্যমে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এটুআইর প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেছেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ইনোভেশন চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে এমন একটি এডুইনফোটেইনমেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে, যেখানে খাতভিত্তিক কনটেন্টের পাশাপাশি ব্যবহারকারী তথা দর্শকদের তৈরি কনটেন্টও দেয়া যাবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে বিনোদন, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কর্মক্ষেত্রের সব ধরনের কনটেন্ট থাকবে, যা সাধারণ জনগণের জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে সহযোগিতা করবে।