ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এইচএসবিসির বিনিয়োগকারীরা বিভক্ত করার পরিকল্পনা ভেস্তে দিলেন

এইচএসবিসির বিনিয়োগকারীরা বিভক্ত করার পরিকল্পনা ভেস্তে দিলেন

দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনকে (এইচএসবিসি) বিভক্ত করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী। ফলে আপাতত বিভক্ত হচ্ছে না বহুজাতিক এ ব্যাংক। খবর: দ্য গার্ডিয়ান।

এইচএসবিসির চেয়ারম্যান মার্ক টাকার বলেছেন, এশিয়ার কার্যক্রমকে পৃথক করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য এইচএসবিসির বেশিরভাগ শেয়ারধারী তাকে ও বোর্ডকে সমর্থন করেছেন। গত শুক্রবার ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত এইচএসবিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

বার্মিংহামে এ সভা চলাকালে সভাস্থলের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন পরিবেশবাদীরা। এর মধ্যে সভার ১২ মিনিটের মাথায় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী বৈঠকে বাধা দেন। এ সময় এইচএসবিসির প্রধান নির্বাহী নোয়েল কুইন বারবার কথা বলা বন্ধ রাখেন। ফলে প্রায় এক ঘণ্টা স্থবির থাকে সভার কার্যক্রম। বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যাংকের অর্ধেকের বেশি শেয়ারধারী ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে এক-পঞ্চমাংশ ভোট এইচএসবিসি বিভক্ত করার প্রস্তাবের পক্ষে পড়েছে। বাকি সবাই এর বিপক্ষে তাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এইচএসবিসির সবচেয়ে বেশি লাভ আসে এশিয়া অঞ্চল থেকে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির সময় বিশেষ করে ২০২০ সালে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি এইচএসবিসি। পরবর্তীকালে দেয়া লভ্যাংশের হার নিয়েও বিনিয়োগকারীদের আপত্তি রয়েছে। এর জেরে গত বছরের শুরুতে এইচএসবিসি এশিয়ার ব্যবসা পৃথক করার দাবি তুলেছিলেন হংকংভিত্তিক বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ।

এ দাবির পেছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল চীনা কোম্পানি পিং আন ইন্স্যুরেন্সের, যারা এইচএসবিসির প্রায় আট শতাংশ শেয়ারের মালিক। তারা গত বছর বলেছিল, ব্যাংকের কার্যক্রম আলাদা করা হলে তা এ অঞ্চলের (এশিয়া) শেয়ারধারীদের জন্য লাভজনক হবে। পরে ব্যাংক বিভক্ত করার দাবি আরো জোরালো হয়। সেই রেশ থাকে পুরো বছর ধরে। হংকংয়ের বৈঠকে এক হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী অংশ নেন। মার্ক টাকার তাদের উদ্দেশে আরো বলেন, আমাদের কৌশল কাজ করছে। আমাদের এখনকার কৌশল হলো লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়ানো।

এ প্রেক্ষাপটে এশিয়ার কার্যক্রম আলাদা করতে ভোটাভুটির জন্য এইচএসবিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় একটি প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবটি করেন লুই ইউ কিন নামের হংকংয়ের একজন স্বতন্ত্র শেয়ারধারী। সেই প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটাভুটি হয়েছে। যদিও এইচএসবিসির পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যাংকটির ইউরোপীয় অংশীদাররা শুরু থেকে এ ধরনের কোনো প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছিল। যেমন এইচএসবিসির তিন শতাংশ শেয়ারের মালিক নরওয়ের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নরজেস ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট চলতি সপ্তাহে জানিয়েছিল, তারা ব্যাংক বিভক্ত করার প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেবে। এইচএসবিসির চেয়ারম্যান মার্ক টাকার ও প্রধান নির্বাহী নোয়েল কুইনও বারবার বলে আসছিলেন, শেয়ারধারীদের এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া উচিত। নোয়েল কুইন বলেন, ব্যাংক ভাগের সিদ্ধান্ত শেয়ারের দামকে আরো কমিয়ে দিতে পারে। এতে আপনাদের লভ্যাংশও ঝুঁকিতে পড়বে। আমাদের বর্তমান কৌশল হচ্ছে, দ্রুততম ও নিরাপদ উপায়ে মুনাফা করা। এর আগে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, এশিয়ার ব্যবসা পৃথক করতে হলে অন্তত ২৫টি ভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন লাগবে। এটা হলে কয়েক বছর ধরে অনিশ্চয়তায় থাকতে হবে। এতে কর্মী ও গ্রাহকরা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারেন। জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে অর্থায়ন কমাতে পরিবেশবাদীদের কাছ থেকে চাপের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম এইচএসবিসি ব্যাংক। শেয়ারধারীরাও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে জানতে চেয়েছেন, ব্যাংকটি তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোয় ঋণ দেয়া কমিয়ে দেবে কি না। জবাবে চেয়ারম্যান মার্ক টাকার ও সিইও নোয়েল কুইন বলেছেন, তারা জলবায়ু সমস্যাগুলোর বিষয়ে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছেন। শূন্য কার্বন নিঃসরণের পথে যেতে তারা সঠিকভাবে অর্থায়ন করছেন। এইচএসবিসি ছাড়াও এর আগে প্রতিদ্বন্দ্বী বার্কলেজ ব্যাংকের সভাও পরিবেশবাদীদের বাধার মধ্যে পড়েছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত