বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। গত ৭ মে ঢাকায় উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাতে আলোচনার মূল বিষয়গুলো ছিল- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে পারস্পরিক স্বার্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু, বিশেষ করে মার্কিন বাজারে উচ্চমানের পোশাকসহ পোশাক রপ্তানি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া তারা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা এবং প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত রাখার প্রস্তুতিসহ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কীভাবে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, এই অর্জনগুলোর কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রতি বৈশ্বিক ক্রেতাদের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি রাষ্ট্রদূতকে আরও অবহিত করেন সরকার, ব্র্যান্ড, আইএলও এবং উন্নয়ন অংশীদারদের কর্তৃক যৌথভাবে গৃহীত শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ উদ্যোগগুলো, সেই সঙ্গে ব্যাপক নিরাপত্তামূলক উদ্যোগগুলো কীভাবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে রূপান্তরিত করেছে, যা যুগপৎভাবে পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। পাশাপাশি বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক সবুজ পোশাক কারখানার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় অবস্থান নিশ্চিত করেছে। এছাড়া তিনি শ্রম অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনি সংস্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কেও মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন। ফারুক হাসান পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মাসিক মজুরির জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠনের বিষয়েও রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, এই অর্জনগুলো বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে অন্যদের জন্য অনুকরণীয় একটি রোল মডেলে পরিণত করেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বেসিক আইটেম থেকে মূল্য সংযোজিত পোশাক, বিশেষ করে নন-কটন ও টেকনিক্যাল টেক্সটাইল ভিত্তিক পণ্যে যাওয়ার মাধ্যমে তৈরি পোশাকখাতে বৈচিত্র্যকরণের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছে এবং সেইসঙ্গে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার জন্য প্রযুক্তিগত মানোন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা গ্রহণ ও বিনিয়োগ করছে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলা দিয়ে প্রস্তুত করা পোশাকের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়ার জন্য মার্কিন সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এতে করে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকেরা এবং মার্কিন তুলা চাষিরা উভয়েই উপকৃত হবে। উভয়ের জন্য একটি উইন উইন পরিস্থিতি তৈরি হবে। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির প্রক্রিয়া সহজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করেন। বিজিএমইএ সভাপতি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিজিএমইএ এর উদ্যোগে বাংলাদেশ অ্যাপারেল সামিট আয়োজনের বিষয়ে অবহিত করেন এবং ইভেন্টটি আয়োজনে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান। তিনি মেধাস্বত্ত অধিকার (ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট) এবং কাউন্টারফিট পণ্য বিষয়ে সদস্যদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বিজিএমইএ এর গৃহীত উদ্যোগগুলো সম্পর্কেও রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন। তিনি শ্রমিক, ইউনিয়ন নেতা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য যৌথভাবে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করে সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ক গড়ে তুলতে মার্কিন সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি আরো রেজিলিয়েন্ট সাপ্লাই চেইন গড়ে তোলার জন্য নৈতিক ক্রয় অনুশীলন এবং পণ্যের ন্যায্য মূল্যের ওপর জোর দেন, যেখানে শ্রমিকদের অধিকার এবং কল্যাণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশাল অগ্রগতি সাধনের জন্য বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রশংসা করেন এবং অর্জনগুলোকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর জোরালোভাবে গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আগামী দিনেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন লীনা খান, লেবার অ্যাটাশে, শ্রম বিভাগ; আর্তুরো হাইন্স, ডেপুটি পলিটিক্যাল ইকোনমিক কাউন্সেলর, মেগান ফ্রাঙ্কিক, ইউএসডিএ/এফএএস, এগ্রিকালচারাল অ্যাটাশে, ক্যাটলিন ডেনজলার, ইউএসএআইডি/ডিআরজি লেবার টিম লিড, ইমেলদা মল্লিক, ইউএসএআইডি/ডিআরজি, লেবার টিম এবং সাইফুজ্জামান মেহরাব, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভাগ, শ্রম সহকারী।
বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, সহ-সভাপতি (অর্থ) খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন, সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, পরিচালক নাভিদুল হক, পরিচালক রাজীব চৌধুরী, পরিচালক ব্যারিস্টার ভিদিয়া অমৃত খান, পরিচালক মো. ইমরানুর রহমান, পরিচালক মিজানুর রহমান, পরিচালক নীলা হোসনে আরা এবং বিজিএমইএ’র বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।