জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অগ্রগতি দৃশ্যমান হলেও মাতৃমৃত্যু, বেকারত্ব, অপুষ্টিসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে আরো উন্নতি দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতির জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে জোর দিয়েছে সরকার। এসব কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন। সেই সঙ্গে শুধু প্রবৃদ্ধি অর্জন নয়, প্রয়োজন অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি। গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ১১তম দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক পলিসি নেটওয়ার্ক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন তাগিদ দেন। দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গর্ভনেস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। প্রথম দিনে বিভিন্ন সেশনে প্রায় ১০টির মতো প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘সামাজিক খাতে এখনো উন্নতির জায়গা আছে। দারিদ্র্যতা, বেকারত্ব এখনো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি করছে। সেজন্য এক্ষেত্রে নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টির বিকল্প নেই। তবে সুবিধা বঞ্চিতদের কাছে পৌঁছাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, আশ্রায়ন প্রকল্প, আইসিটি সুবিধা, কমিউনিটি ক্লিনিক সেবায় জোর দেয়া হয়েছে। কর্মক্ষম নাগরিকদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে সরকার।’
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, ‘নায্যতা ও সুযোগের অভাবে অনেকে তাদের সম্ভাবনাগুলো প্রকাশ করতে পারে না। এটি ব্যক্তি ও দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়। এই খাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বিশ্বব্যাংক। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার অব্যবহৃত সম্ভাবনা উন্মোচনে সাহায্য করতে পারে।’
বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, ‘নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানো ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে পারলে ন্যায়সঙ্গত সমাজ তৈরি করবে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, সামাজিক অগ্রগতির অভাব মানে সামাজিক ন্যায় বিচারের অভাব।’
বিভিন্ন অধিবেশনে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া গত তিন বছরে অভূতপূর্ব ধাক্কা খেয়েছে। সেখান থেকে পুনরুদ্ধার করে প্রবৃদ্ধির দিকে যাওয়ার জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। গত দুই দশকে দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছে। জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সব গোষ্ঠীকে সমানভাবে উপকৃত করেনি। সামাজিক অগ্রগতি অধরা রয়ে গেছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের সর্বোচ্চ বৈষম্য রয়েছে। এই অঞ্চলে মোট বৈষম্যের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে পরিস্থিতির দ্বারা চালিত হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আদালতের বৈষম্য কেবল অন্যায় নয়, এটি অদক্ষও বটে। এটি মানব পুঁজি সঞ্চয় করার জন্য প্রতিভা ও প্রণোদনাগুলোর সর্বোত্তম বরাদ্দকে বাধা দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে লাইনচ্যুত করে। নিম্ন ও উচ্চ সুযোগের গোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষ করে শিক্ষা খাতের মধ্যে ব্যবধান পূরণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছ। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যান্স টিমার বলেন, ‘বাংলাদেশে বৈষম্য কমাতে হলে করভিত্তিক অর্থনীতি হতে হবে। এজন্য করজাল সম্প্রসারিত করতে হবে। এটি একটি অপরিহার্য অংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় বৈষম্য কমাতে গতিশীলতা বাড়ানো উচিত। এজন্য যেসব বাধা আছে সেগুলো দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি এজেন্ডা নেয়া দরকার।’
বক্তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়া তার পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নত করা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখা জরুরি। কম সুযোগপ্রাপ্ত বা পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যবসার উন্নতির জন্য সরকারের নীতিমালাগুলো যেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। সেইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলোতেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। যারা কম সচ্ছল লোকের জন্য কাজের সুযোগের অভাব সিংহভাগ দায়ী।