ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রিজার্ভ এখন ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

রিজার্ভ এখন ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। গত সোমবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে মার্চ-এপ্রিল মাসের দায় হিসেবে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার পর রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে। এ অঙ্ক গত ৭ বছরে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। গত রোববার রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। খারাপ অবস্থার কারণে গত অক্টোবরে আকু থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাকি দেশগুলো প্রতি দুই মাস অন্তর নিজেদের মধ্যকার দায় নিষ্পত্তি করে। গত মার্চে আকুতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির ১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ছিল ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন, মে-জুন সময়ে ছিল ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন এবং জুলাই-আগস্টে ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত বুধবার পর্যন্ত ব্যাংকের কাছে ১২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে টাকা উঠে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এতে রিজার্ভ কমার পাশাপাশি টাকার তারল্যেও চাপ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থার উন্নয়নে আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রিজার্ভের অর্থে বিদেশে বিভিন্ন বন্ড, মুদ্রা ও স্বর্ণে বিনিয়োগ; রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন; বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ কেনাবাবদ সোনালী ব্যাংককে ধার; পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে অর্থ দেয়া এবং শ্রীলঙ্কাকে অর্থ ধার দেয়াবাবদ মোট ৮২০ কোটি ডলার দেয়া হয়েছে। আইএমএফ সব সময়ই বলে আসছে, এগুলো বাদ দিয়ে প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব রাখতে হবে। আইএমএফের মতে, এগুলো বাদ দিলে প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়াবে ২ হাজার ১৭০ কোটি ডলারে। অথচ আইএমএফের দেয়া শর্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকৃত রিজার্ভ উন্নীত হওয়ার কথা ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারে। আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারের নিচে থাকতে পারবে না।

রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত ৮ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মাসের আমদানি বিল ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এই অঙ্ক গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রিজার্ভ ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছিল। অবশ্য রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি থাকায় আমদানি ব্যয় সেই অর্থে কমছে না। এ ছাড়া, বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখার অন্যতম সূচকটি ধারাবাহিকভাবে কমছে। যদিও সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডলার সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে, ৮ মে আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা আকুর (মার্চ-এপ্রিল) আমদানি বিলবাবদ ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে এদিন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি ডলারে (২৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে প্রকৃত রিজার্ভ নেমে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারে। প্রতি মাসে ছয় বিলিয়ন ডলার হিসাবে এ রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছায়। ওই বছরের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে রিজার্ভ। এরপর তা বেড়ে করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট। ওই দিন রিজার্ভ ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা চার হাজার ৮০৪ কোটি ডলারে উঠে যায়। এরপর ডলার সংকটে গত বছর থেকে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে রিজার্ভ। ওই অর্থবছরের শেষে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। সাত বছর পর আবারো ২৯ বিলিয়নের ঘরে নেমে আসছে রিজার্ভ। ২০১৭ সালের ২২ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত