জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ

হংকং কনভেনশন শিগগিরই অনুমোদন করবে বাংলাদেশ

বললেন শিল্পমন্ত্রী

প্রকাশ : ১১ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

২০২৩ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা প্রবর্তিত দি হংকং কনভেনশন বাংলাদেশ অনুমোদন করবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। গতকাল বুধবার ঢাকার মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নরওয়ের জলবায়ু ও পরিবেশবিষয়ক উপমন্ত্রী রাগনহিল্ড সজোনার সিরস্টাডের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক সভায় শিল্পমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রতিনিধি দলে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন ইকটার-সেভেনডসেন, নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও নরওয়ের জাহাজ মালিক সমিতির নেতারা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, অতিরিক্তি সচিব মো. জাফর উল্লাহ, শেখ ফয়েজুল আমীন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, দেশের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পে পরিবেশগত, পেশাগত সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। পরিবেশ দূষণ রোধ করতে না পারা, বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনা ও দেশে-বিদেশে নানা নেতিবাচক প্রচারের কারণে এই শিল্পখাত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ২০১১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত কার্যক্রমকে ‘শিল্প’ হিসেবে ঘোষণা করেন। শিল্প মন্ত্রণালয় জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের পরিচালনা, উন্নয়ন ও বিকাশের অংশ হিসেবে ২০১১ সালে ‘শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড শিপ রিসাইক্লিং রুলস’ জারি করে এবং ২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন’ প্রণয়ন করে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন অনুযায়ী এ সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি নরওয়ের সহযোগিতা কামনা করেন। নরওয়ের উপমন্ত্রী রাগনহিল্ড সজোনার সিরস্টাড ‘হংকং কনভেনশন’ অনুমোদনে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এ কনভেনশন অনুমোদনের ফলে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পাবে। নরওয়ে একটি জাহাজ নির্মাণকারী দেশ। মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাওয়ায় নরওয়েতে প্রচুর জাহাজ রিসাইক্লিংয়ের অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশি ইয়ার্ডগুলো এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারে। এজন্য পরিবেশগত ও নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। দি হংকং কনভেনশন ২০২৩ সালের মধ্যে অনুমোদন করা হলে বাংলাদেশ আরও ২ বছর সময় পাবে এ সংক্রান্ত শর্তগুলো প্রতিপালন করার জন্য।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের উন্নয়নে নরওয়ে বিগত একদশক ধরে সহযোগিতা করছে। এরই মধ্যে এ শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। তিনি এ শিল্পের আধুনিকায়ন এবং সমুদ্র ও শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নরওয়ের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান। তিনি জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ কাজে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম প্রধান। বাংলাদেশে ১৬৭টি জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ইয়ার্ড রয়েছে যা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলাতে অবস্থিত। যাদের মধ্যে কার্যরত ইয়ার্ড হচ্ছে ৫০টি। দেশের বার্ষিক জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও অধিক। দেশের ইয়ার্ডগুলো পৃথিবীর ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে থাকে। দেশের সামগ্রিক লোহার চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আসে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প হতে। এ শিল্পে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত রয়েছে। পরোক্ষভাবে প্রায় দেড় লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অন্যদিকে এ দেশের ৬০০ এর মতো রি-রোলিং স্টিল মিল রয়েছে, যেগুলো এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বের যে পাঁচটি দেশ সবচেয়ে বেশি জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার ওপরে।