ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আগামী ৫ বছর উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ রাখার দাবি বিজিএমইএ’র

আগামী ৫ বছর উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ রাখার দাবি বিজিএমইএ’র

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের কাছে নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ (রপ্তানি মূল্যের) হারে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান এবং রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ কার্যকরের নীতি সহায়তা চায় তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ উত্তরা কার্যালয়ে পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান।

লিখিত বক্তব্যে ফারুক হাসান বলেন, সরকার অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে অর্থনীতিকে পরিচালনা করছে, যার প্রশংসা আন্তর্জাতিকভাবে আমরা পাচ্ছি। তবে বৈশ্বিক সংকটকে আমরা পাশ কাটাতে পারব না, বরং কীভাবে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে কিছুটা সুরক্ষিত রাখতে পারি, সেটিই হবে আমাদের কৌশল। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে যেখানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ছিল ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলার, এখন তা কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ২০২০-২১ এ আমাদের রপ্তানি ছিল ৩১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার, সেটি ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে ৪২.৬১ বিলিয়ন ডলার হয়। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে আমরা ৩৮.৫৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছি, যা আগের বছর থেকে ৯ শতাংশ বেশি। তার মানে, আমরা রপ্তানি খাত থেকে ধারাবাহিকভাবে আয় বাড়ানোর পরও রিজার্ভের ওপর থেকে চাপ কমানো যাচ্ছে না। ফারুক হাসান বলেন, আসন্ন বাজেটে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য পরিশোধিত ফি থেকে উৎসে আয়কর কর্তনের হার ২০ শতাংশ হতে হ্রাস করে ১০ শতাংশ করার অনুরোধ জানাই। একইভাবে আমরা তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহারের দাবি জানাই। যেহেতু নগদ সহায়তা কোনো ব্যবসায়িক আয় নয়, তাই নগদ সহায়তার অর্থকে করের আওতার বাইরে রাখাই যুক্তিসংগত।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমাদের পোশাকশিল্প নানা কারণে চাপে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সে তুলনায় পণ্যের দাম বাড়েনি। করোনায় সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়েছিল। রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব প্রণোদনা আছে, তা আরও বাড়ানো দরকার। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সুপারিশগুলো আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে প্রতিফলিত হবে।

এ মুহূর্তে সরকারের কাছ থেকে যে নীতি সহায়তাগুলো আমরা আশা করছি, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো-

১. রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর ১.০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে পূর্বের ন্যায় ০.৫০ শতাংশ করে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর করা। এটি করা হলে উদ্যোক্তারা আত্মবিশ্বাসের সাথে মধ্যমেয়াদি ব্যবসায়িক ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবেন।

২. তৈরি পোশাক শিল্পের এসেসমেন্টের সময় কর আরোপকালে অন্যান্য আয়, যেমন- এধরহ ড়হ অংংবঃং উরংঢ়ড়ংধষ, ঝঁন-পড়হঃৎধপঃ ওহপড়সব এবং বিবিধ খরচকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য করে স্বাভাবিক হারে (৩০ শতাংশ) কর আরোপ না করে কর্পোরেট কর হার ১২ শতাংশ হারে আরোপ করা।

৩. তৈরি পোশাক শিল্পের সাব-কন্ট্রাক্টের ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশের রুল-১৬ এর টেবিল-১ এর আওতায় সাব-কন্ট্রাক্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চুক্তির মূল্য পরিশোধের সময় প্রস্তাবিত ধাপ অনুযায়ী উৎসে কর ধার্য করা, উক্ত করকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করা, অন্যথায় এসেসমেন্টের সময় কর আরোপকালে কর্পোরেট ট্যাক্স হার ১২ শতাংশ হারে কর ধার্য করা।

৮. রপ্তানি বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারকদের ঊজছ (ঊীঢ়ড়ৎঃবৎ জবঃবহঃরড়হ ছঁধহঃং ঋঁহফ) থেকে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য পরিশোধিত ফি হতে উৎসে আয়কর কর্তনের হার ২০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১০ শতাংশ করা। একইভাবে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার। যেহেতু নগদ সহায়তা কোনো ব্যবসায়িক আয় নয়, তাই নগদ সহায়তার অর্থকে করের আওতার বাইরে রাখাই যুক্তিসঙ্গত।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যখন রেমিট্যান্স ও রপ্তানি নেগেটিভ ধারায় প্রবেশ করল তখন রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আমাদের অ্যাগ্রেসিভ কৌশল নিতে হবে। এক্সচেঞ্জ রেট স্থিতিশীল রাখা, বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য ধরে রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সার্বিকভাবে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ধারা সুরক্ষিত রাখতে আমাদের রপ্তানিখাতগুলো, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের সুরক্ষা এবং রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোতে আরো সংবেদনশীল হওয়া ও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। বিজিএমইএ সভাপতি আরো বলেন, বিগত চার দশকে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছালেও পণের ম্যাটেরিয়াল ডাইভারসিফিকেশন তুলনামূলক কম হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের রপ্তানি অনুযায়ী আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৭৩ শতাংশ ছিল কটনের তৈরি, যা ১৩ বছর পূর্বে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৬৯ শতাংশ, অর্থাৎ বিগত ১০ বছরে আমাদের শিল্পের কটননির্ভরতা বেড়েছে, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নন-কটন পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। বর্তমান বিশ্বে ভোক্তাদের ক্রমাগত জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নন-কটন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। যেখানে বিশ্বে মোট টেক্সটাইল কনজাম্পশনের প্রায় ৭৫ শতাংশই নন-কটন এবং কটনের শেয়ার মাত্র ২৫ শতাংশ; বর্তমানে বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যের ৫২ শতাংশ পণ্য নন-কটনের, সেখানে আমাদের নন-কটন পোশাকের রপ্তানির মাত্র ২৬ শতাংশ। বিগত দশকে আমাদের দেশে নন-কটন, বিশেষত ম্যান-মেড-ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও এসব বিনিয়োগ মূলত মূলধন এবং টেকনোলজিনির্ভর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত