ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘বিশেষ সুযোগেও ফেরেনি পাচার হওয়া টাকা’

‘বিশেষ সুযোগেও ফেরেনি পাচার হওয়া টাকা’

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বিশেষ সুযোগ ঘোষণা করা হয়েছিল। তাতে কোনো টাকাই ফেরত আসেনি। স্বার্থান্বেষী মহল কেউ কেউ এ সুবিধা নেবে। কিন্তু নৈতিকভাবে এটা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল রোববার রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘প্রি-বাজেট প্রেস ব্রিফিং অ্যান্ড ডিসকাশন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তারের সভাপতিত্বে কি-নোট উপস্থাপন করেন পিআরআই স্টাডি সেন্টার অন ডমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ড. এম এ রাজ্জাক।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল সরকার। এতে কোনো টাকা ফেরত আসেনি, যা ছিল সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত। এবার আবার প্রত্যাহার হবে। আমারা সাধুবাদ দেব, এটা আর দরকার নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত ১৫ মাস ধরে একটি সমস্যা আছে এবং তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এটা যত দীর্ঘায়িত হয়, সমস্যা বড় হবে ও ক্ষত বাড়তে থাকবে। সাধারণ মানুষের ওপরে দীর্ঘস্থায় বোঝা চাপতে থাকবে এবং তা বড় হতে থাকবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক টিম গঠন করবে, যেটার মাধ্যমে নীতিগুলো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।

তিনি আরো বলেন, সরকার যেটা এখন পর্যন্ত করেছে, তা খুবই ক্ষুদ্র, বড় কিছু করেনি। বড়র মধ্যে করেছিল এক্সচেঞ্জ রেট নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত। সরকার এখনো সুদ হার পরিবর্তন করেনি। মূল্যস্ফীতিকে অ্যাড্রেস করার জন্য এখনো পর্যন্ত একটি পলিসি করেনি; মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। রিজার্ভ নিয়ে এখন পর্যন্ত যে পলিসি নিয়েছে, তাতে হ্রাস বন্ধ হয়নি। এটা চলছেই। গত ৯ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। আগামী ৮ থেকে ৯ মাস যদি আরো ৮-৯ বিলিয়ন হারায়, তাহলে আমরা কোথায় থাকব?

রিজার্ভ নিয়ে তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় সরকারের নীতি কাজ করছে না। যদি কাজ না করে তাহলে নীতির পরিবর্তন করতে হবে। সরকারের নীতি হওয়া উচিত, আমরা আর রিজার্ভ বিক্রি করব না, প্রত্যেকে মার্কেটে যাও। তাহলে মার্কেটে মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হবে। আস্তে আস্তে স্থিতিশীলতা আসবে। আর সরকার যে ধার করে নিয়ে আসবে, সেটা জমা হবে। রিজার্ভ বাড়বে। আমাদের যেটা হচ্ছে, আস্থার ঘাটতি। রিজার্ভ সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। আর এর ফলে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে। এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। ঝুঁকিতে পড়বে প্রবৃদ্ধি।

ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, দেশের ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে চাপের আভাস থাকলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের ৫০ বছরের পরিক্রমায় আজকে যে অবস্থানে, তা একটি ইতিবাচক চিত্র। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়িতে নেই; এটি অগ্রগতি ও উৎসাহব্যঞ্জক কতকগুলো সাফল্যের গল্প বলে মনে করেন তিনি। এখন আমরা শুধুই সামনে যাচ্ছি। বাজেট ব্যবস্থাপনায় এক অসাধারণ কাজ করছে বাংলাদেশ। ব্যাস্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ করছে। এটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাংক পর্যন্ত স্বীকার করেছে। গত ২০ থেকে ২৫ বছরে আমরা ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভালো করেছি। বৈদেশিক বাণিজ্যে যদিও ঘাটতি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ব্যষ্টিক অর্থনীতির লক্ষপূরণ হবে না। রাজস্ব আদায়, প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয় বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন চাপে আছে। এই ঘাটতির ওপর আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট প্রাক্কলন করা হবে। এছাড়াও লিখিত বক্তব্যে পিআরআই জানায়, দেশের অর্থনীতি সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপের সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপি মার্কিন ডলারের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি আরও অস্থিরতা তৈরি করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এর বিপরীতে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়েনি। এতে রিজার্ভ দ্রুত সময়ের মধ্যে কমে যাচ্ছে। ডলার সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি কমানোসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব পদক্ষেপের কারণে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বেড়েছে।

তারা আরো জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ ব্যাপকহারে কমেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৭১ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষ নাগাদ ২ হাজার ১২৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসতে পারে বলে মনে করছেন পিআরআই।

এদিকে জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে আমদানির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এছাড়া চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমতে পারে। অর্থনীতির এই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অনুমান করেছে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্যে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ ধরা হয়েছে বলে সংস্থাটি উল্লেখ করে।

সংস্থাটি আরো জানায়, এমন পরিস্থিতির মধ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জাতীয় নির্বাচনের কারণে আসন্ন বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপ, অনিশ্চিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক জলবায়ু এবং নির্বাচনি গতিশীলতার মধ্যে আইএমএফের শর্ত বাংলাদেশ কীভাবে পূরণ হয়, তা দেখার বিষয়।

পিআরআই জানায়, সম্প্রতি মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বা ১৫ শতাংশ বেশি। যেখানে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা এর আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। এছাড়া নন-এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা এবং কর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত