ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ ১৩ দাবি ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের

শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ ১৩ দাবি ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের

ট্যানারি শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই, নির্যাতন বন্ধ ও ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করাসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ট্যানারি শ্রমিকরা মালিকদের অন্যায় আচরণ ও শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুতির বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের শরণাপন্ন হলে তাদের কাছ থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা পান না। বরং উওঋঊ কর্তৃপক্ষ তাদের আইনগত সীমাবদ্ধতার কথা বলে এড়িয়ে যান।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ‘আমরা যখন কোথাও কোনো সহযোগিতা না পেয়ে আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য শ্রম আদালতে যাই, সেখানেও বছরের পর বছর মামলাগুলো ফয়সালা না হওয়ায় শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়ায় শ্রমিকরা বিচারিক কার্যক্রমসহ আদালতের ওপর তাদের আস্থা হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। ঢাকা হাইড এন্ড স্কিন্স লিমিটেডের মালিক কর্তৃপক্ষ ২৭ শ্রমিককে বেআইনিভাবে চাকুরিচ্যুত করলে শ্রমিকরা ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতে মামলা করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও মামলার কোনো নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আয়োজকরা বলেন, ট্যানারি শিল্প সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে দ্রব্যমূল্যর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে নতুন মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। ট্যানারি শিল্পে সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নে ন্যাশনাল প্লান আব একশন দ্রুত কার্যকর করা। শ্রমিক ছাঁটাই হয়রানি বন্ধ সহো ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে নিম্নতম মজুরি ১৩ হাজার ৫০০ টাকা পেয়ে থাকে। যদিও বাস্তবে তারা কন্ট্রাক্টরদের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় আরো কম পায়। সেজন্য দ্রব্যমূল্যের দামের সঙ্গে মিল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা বেতন করার দাবি জানান তারা।

লেভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান বলেন, মজুরি নির্ধারণ হয় ১৮ সালে। কথা ছিল জিনিসপত্রের দাম বাড়লে প্রতি বছর ৫ শতাংশ মজুরি বাড়বে। এ নিয়ম ছিল একসময়। নিম্নতম মজুরি নির্ধারণে কমিশন আছে, তাও ট্যানারি সেক্টরে এগুলো কার্যকর না। গার্মেন্টস সেক্টর একটা শৃঙ্খলার মধ্যে এলেও ট্যানারি শিল্পে আসেনি।

তাদের দাবিগুলো হলো

১. দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্যানারি শিল্প সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য দ্রুত নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠনসহ নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও ঘোষণা করতে হবে।

২. সরকারঘোষিত নিম্নতম মজুরি এবং সিবিএ চুক্তি মোতাবেক বিভিন্ন গ্রেডে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য যে নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ রয়েছে তার কম মজুরি দিয়ে কোনো শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না।

৩. ট্যানারি কারখানাগুলোতে শ্রম আইনের সকল ধারা বাস্তবায়নে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান ব্যতিরেকে কোনো শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না।

৪. শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে সেইফটি কমিটি গঠন পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করাসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫. চামড়া শিল্পনগরীতে অবিলম্বে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল এবং শ্রমিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

৭. সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সিইটিপিকে (ঈঊঞচ) পুরোপুরি কার্যকর করার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (খডএ)-এর সনদ অর্জনের পথ অগ্রসর করতে হবে।

৮. অসৎ উদ্দেশ্যে শ্রমিক হয়রানি ও তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করা বন্ধ করতে হবে।

৯. অবিলম্বে মধ্যস্বত্বভোগী কন্ট্রাক্টর বা ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করানো বন্ধ করতে হবে।

১০. আইএলও (ওখঙ) কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ মোতাবেক শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা এবং আইন দ্বারা স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার চর্চায় প্রশাসনিক এখতিয়ার বর্হিভূত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

১১. ট্যানারি শিল্পের জন্য গৃহিত ‘ন্যাশনাল প্ল্যান অব এক্শন’ অর্থাৎ জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১২. ট্যানারি শিল্পকে আনুষ্ঠানিক সেক্টরের ধারাবাহিকতায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

১৩. ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের হ্রাসকৃত মূল্যে (বাধা দরে) চাল, ডাল, আটা, তেল, লবণ, চিনি, ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত